কখনও ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রসূতিদের বসিয়ে রাখা, কখনও বা তাঁদের হাসপাতাল বা বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার পরে মোটা টাকার দাবি কৃষ্ণনগরের জেলা সদর হাসপাতালের মাতৃযান চালকদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে বার বার। কিন্তু এ বার প্রসূতির বাড়ির লোককে মারধরের অভিযোগ উঠল মাতৃযানের এক চালকের বিরুদ্ধে। ঘটনায় রবিবার সকালে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়ায় হাসপাতাল চত্বরে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে অন্যান্য প্রসূতিদের বাড়ির লোকেরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। ঘটনার পর অবশ্য টনক নড়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তড়িঘড়ি মাতৃযানের ব্যবস্থা করে অসুস্থ দুই শিশু ও তাদের মায়েদের কলকাতার নীলরতন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার ব্যবস্থা করা হয়। হাসপাতাল সুপার হিমাদ্রী হালদার বলেন, “রবিবারের ঘটনার কোনও অভিযোগ পাইনি। তবে এর আগে মাতৃযান নিয়ে একাধিক অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে।” তিনি আরও বলেন, “গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সম্পূর্ণ সরকারি খরচে প্রসূতিদের বাড়ি থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসা এবং প্রসবের পরে সদ্যোজাত-সহ তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি অন্য কোনও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করলে সেখানেও পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব মাতৃযানের। তার জন্য প্রসূতির পরিবারকে কোনও খরচ বহন করতে হয় না। সদর হাসপাতালে এই মুহূর্তে এই রকম ছ’টি মাতৃযান রয়েছে। ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে সেগুলি চালানো হয়।
রোগীর পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, চাপড়ার হাটরার বাসিন্দা মান্না বেওয়ার দুই মেয়েই জেলা সদর হাসপাতালে সন্তান প্রসব করেন। দু’টি শিশুরই শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় রবিবার সকালে চিকিৎসকরা তাদের কলকাতার হাসপাতালে ‘রেফার’ করেন। কিন্তু সকাল সাড়ে ৯টা থেকে মাতৃযানের জন্য নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করা সত্ত্বেও কোনও মাতৃযানের দেখা পাওয়া যায়নি। অভিযোগ, সেই সময় হাসপাতাল চত্বরেই একটি মাতৃযান দাঁড়িয়ে ছিল। বিষয়টি জানার পরে মান্না নওদা ও তাঁর স্ত্রী সেই মাতৃযানের কাছে গিয়ে চালককে অনুরোধ করেন দুই প্রসূতি-শিশুকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু চালক যেতে অস্বীকার করলে বচসা শুরু হয়। তখনই ওই চালক ওই মহিলাকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। মান্না নওদা বলেন, “ওই মাতৃযানের চালককে বহু বার অনুরোধ করলাম। কিন্তু উনি যেতে অস্বীকার করেন। বাধ্য হয়ে প্রতিবাদ করায় আমার স্ত্রীকে মারতে শুরু করেন।” ঘটনার পরে হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য রোগীর পরিবারের লোকজন প্রতিবাদ করেন। শেষ পর্যন্ত দুপুর একটা নাগাদ মেলে মাতৃযান।