মনোনয়নপত্র জমা দিচ্ছেন তৃণমূল প্রার্থী সত্যজিৎ বিশ্বাস।
সময়: বুধবার, দুপুর সাড়ে ১২টা।
স্থান: রানাঘাটের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের অফিস।
মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেছেন কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনের প্রার্থী সত্যজিৎ বিশ্বাস। ঘরে ঢুকে সত্যজিৎবাবুর ঠিক পিছনের চেয়ারে গিয়ে বসলেন তৃণমূলের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা আইনজীবী তপনকুমার রুদ্র। পাশের চেয়ারে বসা রানাঘাটের (দক্ষিণ) বিধায়ক আবীর বিশ্বাসকে তপনবাবু জিজ্ঞাসা করলেন, “আমাদের প্রার্থী কোনটা?” আবীরবাবু ঈশারায় সামনের চেয়ারটি দেখিয়ে দেন। পরে বাইরে বেরিয়ে তপনবাবু অবশ্য স্বীকার করেন, “আমি তো প্রার্থীকে চিনতাম না। তাই আবীরকে জিজ্ঞাসা করছিলাম।”
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়ে গিয়েছে। জেলা নেতাদের সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে এলেন সত্যজিৎবাবু। দুপুর ১টা ১৫ নাগাদ মহকুমাশাসকের বাংলোর সামনে প্রার্থীর সঙ্গে মুখোমুখি দেখা মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের। সটান মন্ত্রীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলেন সত্যজিৎবাবু। হঠাৎ দেখায় প্রার্থীর হাসি চওড়া হলেও মন্ত্রী শুধু জানতে চাইলেন, “বাকিরা কোথায়?”
পাশ থেকে তৃণমূলের এক কর্মীর ফুটনোট, “যাক বাবা, অবশেষে মন্ত্রীমশাই এলেন। এ বার সত্যর লড়াই অনেকটাই সহজ হয়ে গেল।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সত্যজিৎবাবুর প্রার্থী হওয়া ও মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বিধান পোদ্দারের প্রার্থী না হতে পারা নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই জলঘোলা হচ্ছিল। বিধানবাবুকে প্রার্থী না করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন দলের অনেকেই।
সেই অস্বস্তি আর বাড়তে না দিয়ে এ দিন উজ্জ্বলবাবু বলেছেন, “আমার লোক বলে কেউ নেই। আমি যাঁদের রাজনীতিতে নিয়ে এসেছি, তাঁরা আমার কেউ নয়। তাঁরা সকলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোক। এমনকী, আমি নিজেও। আমাদের দলে কোনও গোষ্ঠকোন্দল বলেও কিছু নেই। ওটা কাগজের কথা।”
আর গৌরীবাবু বলেছেন, “যাঁরা বলছিলেন গোষ্ঠীকোন্দল রয়েছে। তাঁরা এসে দেখে যান, এই তো উজ্জ্বল এসেছে। আর তো কোনও কথা থাকতে পারে না।”
জেলা নেতাদের একাংশের দাবি, এই সৌজন্য সাক্ষাৎ কিন্তু অনেকটাই বরফ গলিয়ে দিল। যদিও কর্মীদের একটা বড় অংশ বলছেন, “ব্যাপারটা কিন্তু এত সহজ নয়।” আর হাঁসখালি দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা, রাধাসুন্দরী পালচৌধুরী বিদ্যাপীঠের করণিক, তৃণমূলের দক্ষ কর্মী ও সংগঠক বলে পরিচিত সত্যজিৎবাবু ওই বিতর্কে না ঢুকে বলছেন, “আমার প্রধান প্রতিপক্ষ বামফ্রন্ট। আমার সঙ্গে লড়াই হবে তাদের। ওখানে বিজেপি-র কিছু নেই। ওদের হিসাবে ধরছি না।”
এ দিকে মঙ্গলবার কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে মানবেন্দ্রনাথ রায়কে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি। কল্যাণীর বি ব্লকের বাসিন্দা, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শস্য বিজ্ঞান বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, রাজনীতির আঙিনায় একেবারেই আনকোরা মুখ, মানবেন্দ্রনাথবাবু বুধবার সকাল থেকেই প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। এ দিন তিনি বাদকুল্লা বাজার এলাকা-সহ স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৯টি বুথে পায়ে হেঁটে প্রচার করেছেন। প্রচারে গিয়ে ভোট চাওয়ার পাশাপাশি তিনি চাষিদের মুখ থেকে নানা সমস্যার কথা মন দিয়ে শুনেছেন। বাতলে দিয়েছেন সমাধানেরও পথও। মানবেন্দ্রনাথবাবু বলেন, “সিপিএম মুছে গিয়েছে। কংগ্রেস নেই। তৃণমূল রোজই একটু একটু করে ক্ষয়ে যাচ্ছে। তবুও তৃণমূলই আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী। এ দিন প্রচারে বেরিয়ে মানুষের যা উন্মাদনা দেখলাম তাতে আমাদের জয় নিশ্চিত।”
প্রসঙ্গত মানবেন্দ্রনাথবাবু বিজেপির প্রার্থী হতে চেয়ে নিজের বায়োডাটা জমা দিয়েছিলেন বিজেপির নদিয়া জেলা সভাপতি কল্যাণ নন্দীর কাছে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণগঞ্জে ৮টি ও বনগাঁ লোকসভায় উপ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেয়ে ২৩টি বায়োডাটা জমা পড়েছিল। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেছেন, “এমন অনেকেই বায়োডাটা জমা দিয়েছেন যাঁরা আমাদের দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। আর সেটা থেকেই বোঝা যাচ্ছে, বিজেপিকে নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ ঠিক কোন পর্যায়ে।” কৃষ্ণগঞ্জের সেই আটটি আবেদনপত্রের মধ্যে থেকেই মানবেন্দ্রনাথবাবুকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
বিজেপির এক জেলা নেতা বলছেন, “আগে আমাদের ঠিকঠাক প্রার্থী পেতে কালঘাম ছুটে যেত। এ বার প্রার্থী বাছাই করাই কঠিন হয়ে পড়েছিল।”
ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।