ক্রিকেটের স্লগ ওভারের মতো। বেলা যত গড়িয়েছে, বেড়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে ব্যবধান। এক সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ধরা-ছোঁওয়ার বাইরে চলে যায় হিসাব। শেষ পর্যন্ত নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙে দিলেন। ৩ লক্ষ ৫৬ হাজার ৫৬৬ ভোটে জিতলে বহরমপুরের কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী।
অধীরের রেকর্ড জয়ের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, “সারা বছর মানুষের সঙ্গে তিনি থাকেন, তাই মানুষও তাঁর সঙ্গে থাকেন। এই জয় তারই প্রতিফলন।” সেই সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, “বহরমপুরে আসার পর থেকেই যিনি জয়ের ব্যাপারে ২০০ শতাংশ নিশ্চিত ছিলেন, সেই তৃণমূল প্রার্থীর জয়ের ফানুস এখন বহরমপুরের মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।”
বহরমপুর লোকসভা এলাকার সাতটি বিধানসভাতেই অধীরবাবু এগিয়ে রয়েছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন বহরমপুর বিধানসভা এলাকায়। ওই বিধানসভায় অধীরবাবু এ বার ভোট পেয়েছেন ১ লক্ষ ৮৬ হাজার ৭৮। অন্য দিকে সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন বড়ঞা বিধানসভা এলাকায়। বড়ঞাতে তিনি ভোট পেয়েছেন ৭০ হাজার ২১৩।
অন্য দিকে বহরমপুরে তৃণমূলের প্রার্থী পেয়েছেন মাত্র ৩১৩৮২ ভোট। যদিও কয়েক মাস আগে বহরমপুর পুরভোটে তৃণমূল ভোট পেয়েছিল ২৮.৮০ শতাংশ। পুরনির্বাচনের ওই ভোটও ইন্দ্রনীলবাবুর ব্যালট বাক্সে পড়েনি। গত পুরভোটে তৃণমূলের মোট ভোট পেয়েছিল প্রায় ২৬ হাজারের কাছাকাছি। ওই ভোট ধরে রাখতে পারলেও বহরমপুর বিধানসভা এলাকায় তাঁর ভোট বাড়ত। কিন্তু তা হয়নি। এমনকী তৃণমূলের যে দুজন কাউন্সিলর দুটি ওয়ার্ড থেকে জয়ী হন, সেই দুটি ওয়ার্ড থেকেও ইন্দ্রনীলবাবুর চেয়েও বেশি ভোটে পেয়েছেন অধীরবাবু। ওই দুটি ওয়ার্ডে যথাক্রমে ১৩০০ ও ১১০০ ভোট বেশি পান তিনি। তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি হুমায়ুন কবীরের অভিযোগ, “বামফ্রন্টের ভোট অধীর চৌধুরীর ব্যালট বাক্সে পড়ার ফলেই জয়ের ব্যবধান বেড়েছে।”
এ দিকে, এই নিয়ে টানা চার বার প্রমথেশবাবু হারলেন। সেই সঙ্গে গত বারের প্রাপ্ত ৩ লক্ষ ৫৪ হাজার ৯৪৩ ভোটও এ বারে প্রমথেশবাবু ধরে রাখতে পারেননি। এ প্রসঙ্গে তাঁর সংক্ষিপ্ত জবাব, “পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করে দেখার এখনও সময় পাইনি।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “বহরমপুর কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। ফলে তাঁর জয় খুব স্বাভাবিক।” সেই সঙ্গে জেলার বাকি দুটি আসন প্রসঙ্গে মৃগাঙ্কবাবুর বক্তব্য, “জঙ্গিপুরে অর্থের বিনিময়ে কংগ্রেস ভোট কিনেছে। আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা কিছুটা হলেও খারাপ ফলের জন্য দায়ী। তবে মুর্শিদাবাদ লোকসভায় আমাদের ভোট ভাল হয়েছে। ওই আসনটি জানতাম আমরা জিতব। ওই আসনে মানুষ সিপিএমের উপরে আস্থা রেখেছে।”
অধীরবাবু এ দিন বহরমপুরে অনুপস্থিত থাকায় জয়ের উৎসব ফিকে হয়ে যায়। এদিন সকাল থেকেই কংগ্রেসের জেলা কার্যালয়ে উৎসাহী মানুষের ভিড় ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে ভিড় বেড়েছে, তেমনই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে উন্মাদনা। তখন দুপুর দেড়টা। ওই দলীয় কার্যালয় থেকে কয়েকশো মিটার দূরত্বে বহরমপুর গালর্স কলেজে চলছে গণনা। অন্য এক শূন্যতা কৃষ্ণনাথ কলেজ লাগোয়া গোরবাজারে তৃণমূলের জেলা কার্যালয়ে। জেলা কার্যালয়ের মধ্যে টিভি চলছে। কিন্তু টিভির পর্দায় চোখ রাখার মত জনশূন্য কার্যালয়ে তখন কারও দেখা নেই।