সচেতনতা শিবির। —নিজস্ব চিত্র
কেউ কিশোরী, কেউ বা সদ্য যুবতী। আবার কেউ বা নেহাতই শিশু। রেহাই নেই কারও। লোভী সমাজের আনাচে কানাচে ওঁৎ পেতে আছে হাজার দাঁত নখ। তাই সচেতন হতে হবে। বিশেষত শিশুদের। নিষ্পাপ, অবোধ শিশুরা কোনও কিছু ঠিকঠাক বুঝে ওঠার আগেই নেমে আসে দুবির্পাক। আর সেক্ষেত্রে শুধু মেয়েরা নয়, প্রতিদিন অত্যাচারের শিকার হচ্ছে ছেলেরাও। সমান ভাবে।
এ সব কথাবার্তাই হয়ে গেল রানাঘাটে। না, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলঘরে ভারী ভারী মানুষের আলোচনায় গুরুগম্ভীর কোনও সেমিনার নয়। গঙ্গার ধারে খোলা হাওয়ায় একটা গোটা দিন। নাচ, গান, কবিতা, কলাপাতায় খিচুড়ি, বেগুনি, বোঁদের মহাভোজ। আর খোলামেলা কথাবার্তায় ছোট-বড় পড়ুয়ারা। প্রায় ৮২ জন পড়ুয়া, সঙ্গে বেশ কয়েকজন অভিভাবকরাও ছিলেন। নদিয়া চাইল্ড লাইন এবং চাকদহ বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থার আয়োজনে এমন একটা দিন কেটে গেল চান্দুরিয়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের গৌরনগর ঘাটে। সংস্থার তরফে জানা গেল, ‘চাইল্ড লাইন সে দোস্তি’ নামে একটি প্রকল্প নিয়েছেন তারা। ১৪ নভেম্বর জাতীয় শিশু দিবস থেকে ২০ নভেম্বর আন্তর্জাতিক শিশু দিবস পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের অনুষ্ঠান করছেন সদস্যরা। যেখানে সরাসরি পড়ুয়াদের সঙ্গে মিলিত হচ্ছেন সংস্থার সদস্যরা। নাচ, গান, কবিতার মধ্যে দিয়েই গড়ে উঠছে বন্ধুত্ব। তার ফাঁকে ফাঁকেই কথা হল বাচ্চাদের নিজস্ব সমস্যা নিয়ে।
ঘুঘিয়া হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী রিম্পা তরফদার ও সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ইপ্সিতা বিশ্বাস জানায় তারা যখন স্কুলে যায় তখন রাস্তার ধারে বেশ কিছু ছেলে দাঁড়িয়ে থাকে সাইকেল নিয়ে। মেয়েদের উদ্দেশ করে কত কী বলে! ওই রাস্তা দিয়ে যেতে ওদের ভয় করে। অভিজ্ঞতাটা প্রায় একই রকম কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়া ছাত্রী পিয়ালি মণ্ডলের। তিনি বলেন, “রোজ ট্রেনে করে কলকাতা যাওয়ার অভিজ্ঞতাটা ভয়াবহ। প্রতিদিন ভিড়ের মধ্যে নানাভাবে হেনস্তা হতে হয়। অথচ প্রতিবাদ করার সাহস নেই। পরের দিন তো আবার ওই একই ট্রেনে যেতে হবে।” পিয়ালিদেবী নিজে বিজ্ঞান সংস্থার কর্মী। তাই তিনি চান বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে আলোচনার মধ্যে দিয়ে ছোটরা বিষয়গুলো বুঝে নিক। আর শিখুক সে গুলোর মোকাবিলা কীভাবে করা যায়।
ওই বিজ্ঞান সংগঠনের সভাপতি বিবর্তন ভট্টাচার্য বলেন, “ছোটদের নিজেদের অধিকার সম্পর্কে জানাটাও খুব দরকার। তারাই বিভিন্ন ভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। সহজভাবে ওদের সচেতন করে তোলাই আমাদের কাজ।”
চাইল্ড লাইনের সঞ্চালক অপর্না বিশ্বাস বলেন, “শুধু যৌন হেনস্থা বা ধর্ষণ নয়, আরও অনেকভাবেই বিপন্ন হচ্ছে শৈশব। পারিবারিক অশান্তির প্রভাব পড়ছে ওদের উপর, এখনও বহু নাবালিকার বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া অপুষ্টি, অসুস্থতা তো রয়েছেই। আমরা চাই যথাযথ চিকিৎসাটুকুও যেন ওরা পায়। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পগুলোর সুবিধাও ওরা অনেক সময়ই পায় না পারিবারের অজ্ঞতার জন্য। সে সব বিষয়েও আমরা সমাধানের হাত বাড়িয়ে দেব। এ জন্য আমরা একটা হেল্প লাইন নম্বরও রেখেছি।”
‘চাইল্ড লাইন সে দোস্তি’ প্রকল্প যে ছোটদের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে তা বেশ বোঝা ওদের কথা থেকেই। নবম শ্রেণির ছাত্র তুষার ঘোষ বলে, “ছোটদের উপর কোনও অন্যায় হলে চাইল্ড লাইনকে সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেব। জানেন, ওদের ফোন নম্বরও আমার মুখস্থ, ১০৯৮।”