প্রতীকী ছবি।
কিছু দিন থেকেই কথাটা ‘বলব বলব’ করেও বলা হয়ে ওঠেনি। বলা ভাল, সাহসে কুলোয়নি। এ দিকে ভ্যালেন্টাইন ডে দুয়ারে কড়া নাড়ছে। তাই মেয়েটি যখন টিউশন থেকে ফিরছে, ছেলেটি চেয়ে বসল ফোন নম্বর। সেই ফোনেই কি মনের কথা বলত কালীগঞ্জের সুব্রত হালদার?
সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। কিন্তু ফোন নম্বর চাওয়ার শাস্তি জুটেছিল বেধড়ক মার। গুরুতর জখম অবস্থায় সুব্রতকে ভর্তি করা হল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তামাম বিশ্ব যে দিন প্রেমের উদ্যাপন করেছে, সুব্রত মারা গেল সেই সন্ধ্যায়। ১৪ ফেব্রুয়ারির মানেটাই বদলে গেল কালীগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রাম মাটিয়ারিতে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ। সুব্রতর গাঁয়ের লোকজন বলছেন, ‘‘ছেলেটি তো তার মনের কথা বলতে চেয়েছিল। এই অপরাধে ছেলেটাকে মেরে ফেলল গো!’’ মেয়েটির পরিবারের অভিযোগ, এটাই প্রথম নয়। এর আগেও সুব্রত মেয়েটির ফেরার পথে দাঁড়িয়ে থাকত। বছর সতেরোর কিশোরী তা পছন্দ করত না। সে গোটা বিষয়টি তার কাকাকে জানায়। গত ১২ ফেব্রুয়ারি সুব্রত মেয়েটির কাছে ফোন নম্বর চাইলে সে সটান কাকাকে জানিয়ে দেয়। অভিযোগ, সুব্রত ও তার দুই বন্ধুকে তাড়া করে ধরে ফেলে মেয়েটির কাকা ও তাঁর কয়েক জন সঙ্গী। বেধড়ক মারধর করা হয়। সুব্রতকে প্রথমে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল ও পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মারা যায় সে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাটিয়ারিতে ফেরে সুব্রতর দেহ। বছর বাইশের ওই যুবকের এ ভাবে খুন হওয়ার পর থেকে ক্ষোভে ফুটছে মাটিয়ারি। গ্রামের লোকজনের কথায়, ‘‘আমাদের প্রশ্ন, ছেলেটি কী অন্যায় করেছিল? একটা ফোন নম্বর চাওয়া অপরাধ? কাউকে ভাল লাগা, ভালবাসার কথা বলাটা অপরাধ? যদি তা-ই হয়, তা হলে মেয়েটির পরিবার ব্যাপারটা ছেলেটির পরিবার এমনকী পুলিশকেও জানাতে পারত। তা না করে এ ভাবে ছেলেটাকে খুন করার অধিকার তাদের কে দিল?’’
মেয়েটির আত্মীয়ার অভিযোগ, ‘‘ছেলেটি মারা গিয়েছে, দুঃখজনক ঘটনা। কিন্তু ওই ছেলেটি ও তার দুই বন্ধু সে দিন মত্ত অবস্থায় মেয়েটাকে বিরক্ত করছিল। সেটাই সহ্য করতে পারেননি এলাকার কিছু লোকজন।’’
এ দিন মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তার পরিবারের তরফে জানানো হয় যে, ‘‘মেয়ে বাড়িতে নেই।’’ ওই যুবককে পিটিয়ে খুনের অভিযোগে বুধবারেই তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাদের কৃষ্ণনগর আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।