পরিবারের চোখ টিভির দিকে।
ছাব্বিশ বছর আগের একটা দিন এখনও মনে আছে তাঁর। ১৯৯৩ সাল। জয়েন্টের ফল প্রকাশ হয়েছে। তালিকায় চোখ রেখে আঁতিপাতি করে খুঁজছেন নিজের নাম। নাহ, কোত্থাও নেই। সে দিন, তালিকায় নিজেকে খুঁজে না পেয়ে বড় অবাক হন। তুযারকান্তি দাস বলছেন, ‘সেটা বোধহয় শাপে বর হয়েছিল, জানেন!’ খেলা, বন্ধু-সঙ্গ, সিনেমা— সব বন্ধ করে সেই যে ডুব দিয়েছিলেন পড়াশোনায়, ভাসতে ভাসতে সেই স্রোতই আজ তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে চন্দ্রযানের দুয়ারে!
শুক্রবার শেষ রাতে অবতরণ করার কথা চন্দ্রযানের। ইসরোর নিভৃত কোনও ঘরে তিনিও হয়ত দাঁতে দাঁত চেপে অপেক্ষা করবেন। তার পর খুব আচমকা উচ্ছ্বাসে হয়ত খুব জোরে হাততালি দেবেন। হয়ত ছাব্বিশ বছর আগের সেই দিনটার কথাও মনে পড়বে। তার পর....তার পর।
বেলডাঙায় এখনও তাঁর স্বজনের ভিড়। বড়ুয়া কলোনির বাড়িতে বসে তাঁর দাদা কুমারকান্তি বলছেন, ‘‘ছোট থেকেই পড়াশোনা করত কিন্তু বড্ড স্লো ছিল। পরীক্ষা দিয়ে এসেই বলত, ‘জানিস দাদা, সব জানতাম কিন্তু শেষ করতে পারলাম না!’’ হয়ত সে জন্যই প্রথমবার জয়েন্টের তালিকায় নাম ওঠেনি তাঁর। কুমার বলছেন, ‘‘আমরা মজা করে বলতাম, হবে না, তোর দ্বারা কিস্যু হবে না।’’ তবু তো হল। বেলডাঙার স্কুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে গণিত নিয়ে চমকে দেওয়ার মতো ফল করে ২০০৩ সালে ইসরোতে ডাক পেয়েছিলেন তিনি। যোগ দিয়েছিলেন বেঙ্গালুরুতে, সায়েন্টিস্ট ইঞ্জিনিয়র পদে। মা সবিতা দাস অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা। বলছেন, ‘‘জয়েন্টে সুযোগ না পেয়ে ওর জেদ চেপে গিয়েছিল। টানা ছ’মাস নিজেকে বাড়ির চার দেওয়ালে বন্দি করে রেখেছিল। ’’ খড়্গপুর আইআইটি থেকে পাশ করার পরে ইসরোয় যোগ দেন। ২০০০ সালে আসানসোলে একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েও ভাল লাগছিল না। ২০০৩ সালে ইসরোর ত্রিবান্দ্রমের থুম্বাতে যোগ দেন। স্ত্রী-কন্যা নিয়ে তুষারের পরিবার এখন তিরুবনন্তপুরমে। তবে তাঁর আদি নিবাস, বড়ুয়া কলোনির আটপৌরে বাড়িটা আজ ঝলমল করছে। চন্দ্রযান নামবে, বাড়ির ছোট ছেলের ‘ছোঁয়া’ রয়েছে যে তাতে!