মৃত তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। — ফাইল চিত্র।
জোড়া সাক্ষীর এক জন বাতিল হলেন, অন্য জন বিরূপ। কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনের মামলায় শুক্রবার বিধাননগর ময়ূখ ভবনে বিশেষ আদালতে এমনই ঘটল। এই মামলায় এই নিয়ে ছ’জন সাক্ষী ‘বিরূপ’ হলেন।
ওই মামলায় এ দিন সুব্রত মণ্ডল এবং সঞ্জিত বিশ্বাস নামে দু’জনের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল। দুপুরে বিচারক মনোজজ্যোতি ভট্টাচার্যের এজলাসে সরকারি কৌঁসুলিদের তরফে আদালতে জানানো হয়, তাঁরা সুব্রত মণ্ডলকে সাক্ষী হিসাবে চান না। আদালত এই আবেদন মেনে নেওয়ায় তাঁর সাক্ষ্যগ্রহণের প্রয়োজন হয়নি।
সরকারি কৌঁসুলিদের জিজ্ঞাসার জবাবে অপর সাক্ষী সঞ্জিত বিশ্বাস জানান, সরস্বতী পুজোর আগের রাতে একটি চায়ের দোকানে তিনি শোনেন, সত্যজিৎ বিশ্বাসকে গুলি করে খুন করা হয়েছে। এ সম্পর্কে তিনি আর কিছু জানেন না। এর পরেই সরকারি কৌঁসুলিদের তরফে সঞ্জিত বিশ্বাসকে ‘বিরূপ’ ঘোষণা করা হয়। তাঁরা জানতে চান, এই মামলায় পুলিশ সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল কিনা। তিনি সম্মতি জানান। এর পর সরকারি কৌঁসুলি সাক্ষীর উদ্দেশে বলেন, তিনি পুলিশকে বলেছিলেন যে খুনের কিছু দিন আগে মুকুল রায়, জগন্নাথ সরকার, অভিজিৎ পুন্ডারি, সুজিত মণ্ডল, নির্মল ঘোষ অর্থাৎ পাঁচজন অভিযুক্ত মিলে এক জায়গায় বৈঠক করেছিলেন। সেখানে তিনিও ছিলেন এবং সত্যজিৎকে খুনের পরিকল্পনার কথা শুনেছিলেন। সাক্ষী দাবি করেন, তিনি এমন কোনও কথা বলেননি।
অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী সুবীর দেবনাথ সাক্ষীকে বলেন, খুনের দিন পনেরো পর পুলিশ এক বারই তাঁকে জিজ্ঞসাবাদ করেছিল। সাক্ষী সম্মতি জানান। প্রসঙ্গত, এই মামলার প্রথম চার্জশিট জমা পড়েছিল ২০১৯ সালের ৮ মে। তাতে কেবল অভিজিৎ পুন্ডারি, সুজিত মণ্ডল ও নির্মল ঘোষের নামে খুনের অভিযোগ এনেছিল পুলিশ। তদানীন্তন বিজেপি নেতা মুকুল রায় ও সাংসদ জগন্নাথ সরকার চার্জশিটে অভিযুক্ত ছিলেন না। ২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর পুলিশ একটি অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেয়, তাতে জগন্নাথ এবং মুকুলের নাম যুক্ত করা হয়।
প্রথম চার্জশিটের ভিত্তিতে রানাঘাট আদালতে মামলার শুনানি শুরু হয়েছিল। ২০১৯-এর ২২ নভেম্বর এই মামলার অভিযোগকারী মিলন সাহার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় রানাঘাট এডিজে আদালতে। কিন্তু পরে কালে সিআইডি-র আবেদনের জেরে মামলাটি বিধাননগরে ময়ূখ ভবনের বিশেষ আদালতে স্থানান্তরিত হয়। তত দিনে অতিরিক্ত চার্জশিট হয়ে গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বিভিন্ন রাজ্যে গড়ে উঠেছে ওই বিশেষ আদালত যেখানে সেই সব ফৌজদারি মামলার নিষ্পত্তি হয় যার সঙ্গে কোনও বিধায়ক বা সাংসদ সম্পর্কিত থাকেন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এই খুনের মামলার শুনানি ওই বিশেষ আদালতেই চলছে।