অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
মুর্শিদাবাদ ‘অধীর গড়’ বলেই পরিচিত। কিন্তু ২০১৬ সালের পর থেকে দল ভাঙিয়ে কংগ্রেস পরিচালিত জেলা পরিষদ থেকে শুরু করে একের পর এক গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, পুরসভা তৃণমূল দখল করতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, কংগ্রেসের বিধায়কদের দলে টানতে শুরু করে। যার জেরে এক দিকে তৃণমূল মুর্শিদাবাদে যত শক্তিশালী হয়েছে, অন্য দিকে নিজের গড়ে কংগ্রেস ততটা শক্তি হারিয়েছে।
২০১৮ সালে তৃণমূল এই জেলায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের অধিকাংশ দখল করেছিল। সেই সঙ্গে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেও মুর্শিদাবাদের দু’টি আসন দখল করার পাশাপাশি অধীর চৌধুরীকে জোর ধাক্কা দেয় তৃণমূল। যেখানে অধীর সাড়ে তিন-চার লক্ষ ভোটে জয়ী হতেন সেখানে সে বার মাত্র ৮০ হাজার ৬৯৬ ভোটে জয়ী হন। তারপরে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ জেলায় কংগ্রেস শূন্য হয়ে যায়। সদ্য হয়ে যাওয়া পঞ্চায়েত ভোটও তৃণমূলের অনুকূলে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দোরগোড়ায় লোকসভা নির্বাচন। জাতীয় স্তরে কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিজেপি বিরোধী দলগুলি ‘ইন্ডিয়া’ জোট গড়ার চেষ্টা করলেও শুক্রবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ বাংলায় কংগ্রেসের সাথে জোট না হওয়ার বার্তা দিয়েছেন। বিজেপিও বহরমপুর দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই আবহে অধীর কী তাঁর গড় বহরমপুর ধরে রাখতে পারবেন সেই প্রশ্ন উঠছে। তবে প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘বিধানসভা ও লোকসভা ভোট এক নয়। অধীর চৌধুরী যে ভাবে মানুষের পাশে রয়েছেন তাতে বহরমপুর তো অটুট থাকবেই। সেই সঙ্গে মুর্শিদাবাদের বাকি দু’টি আসনও আমরাই পাব।’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে তৃণমূল নেত্রীকে তাঁর বিরুদ্ধে লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুর কেন্দ্রে লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, আমরা তো তৃণমূলের বিরুদ্ধে, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করে বহরমপুরে, মালদহে জয়ী হয়েছি। হিম্মত থাকলে তৃণমূল নেত্রী বহরমপুরে আমার বিরুদ্ধে এসে লড়াই করুন। জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বর দাবি, অধীর চৌধুরী বরাবরই জনসংযোগ কর্মসূচির মধ্যে থাকেন। তিনি দিল্লি থেকেও মুর্শিদাবাদের প্রতি নজর রাখেন। সেই সঙ্গে বহরমপুর তথা জেলা জুড়ে একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচি যেমন করেন তেমনই প্রশাসনিক কাজকর্ম করেন। রাজনৈতিক জনসভা থেকে শুরু করে যোগদান কর্মসূচি, শীতবস্ত্র প্রদান, খেলার মাঠ বা যে কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে অধীর চৌধুরী যেমন ছুটে যান, তেমনই পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি মুর্শিদাবাদে লালগোলা-শিয়ালদহ রেলপথ কিংবা কাটোয়া-আজিমগঞ্জ রেলপথের সালার থেকে আজিমগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ পরিদর্শন করেছেন। তাঁর সাংসদ এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায় তৈরি প্রকল্পের উদ্বোধনের মতো কর্মসূচির মাধ্যমে সব সময় জনসংযোগের মধ্যেই রয়েছেন।
কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘কখন জোট হবে, কখন ঘোঁট হবে সেই ভরসায় থাকে না মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস। আমরা সর্ব ভারতীয় দল। দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের নির্দেশ মানতে বাধ্য। তবে শুক্রবার জোট নিয়ে তৃণমূল নেত্রী যে মন্তব্য করেছেন তা ‘প্রেসার পলিটিক্স’।’’
জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান রবিউল আলম চৌধুরী বলেন, ‘‘কংগ্রেসের বুথে সংগঠন কোথায় যে ওরা লোকসভায় জয়ী হবে? বহরমপুর সহ জেলার তিনটি আসনেই আমরাই জয়ী হব।’’