বাচ্চার জামাও হয়নি

মিখ নিচু করেই বলেন, ‘‘গত বছর পুজোতেও আমার জন্য শাড়ি এনেছিল। এ বার আর আমার পুজো নেই। শাড়ি দেওয়ার লোকও চলে গিয়েছে।’’

Advertisement

সম্রাট চন্দ

শান্তিপুর শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৫০
Share:

ভুটানের স্ত্রী মেনকা। নিজস্ব চিত্র

বাড়ির সামনে এক চিলতে উঠোনে দাঁড়িয়ে চোখের জল আড়াল করতে মুখ নিচু করেন মেনকা মাহাতো। ঠিক এক বছর আগে এলাকায় বিষমদ কাণ্ডে মৃতদের মধ্যে ছিলেন তাঁর স্বামী ভুটানও।

Advertisement

মিখ নিচু করেই বলেন, ‘‘গত বছর পুজোতেও আমার জন্য শাড়ি এনেছিল। এ বার আর আমার পুজো নেই। শাড়ি দেওয়ার লোকও চলে গিয়েছে।’’

গত বছর নভেম্বর মাসের সেই অভিশপ্ত ভোর শান্তিপুরের প্রান্তিক জনপদ চৌধুরীপাড়া জুড়ে বয়ে এনেছিল মৃত্যুর বার্তা। বিষমদ কাণ্ডে মৃত্যু হয়েছিল মদ বিক্রেতা-সহ ১২ জনের। সেই ক্ষত এখনও টাটকা প্রিয়জন হারানো পরিবারগুলিতে। গ্রামের পুজোর আনন্দও যেন এ বার অনেকটা ম্লান। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা বিশ্বেশ্বর মাহাতো বলছেন, “এত গুলো প্রাণকে চোখের সামনে চলে যেতে দেখেছি আমরা সবাই। ওঁদের পরিবারের লোকেদের কষ্টটাও প্রতিদিন দেখি। তাই পুজোটা হচ্ছে বটে কিন্তু আগের মত প্রাণখুলে আনন্দ করার মানসিকতা নেই কারও।”

Advertisement

ভুটানের স্ত্রী মেনকা, কৃষ্ণ মাহাতোর স্ত্রী আশা, দুলাচাঁদের স্ত্রী শ্রীমতীয়ার গলাতেও একই সুর। এই বছর পুজোর বাজার হয়নি তাঁদের কারোরই। পুজোর কথা উঠতেই চোখ ছলছল করে তাঁদের। ফিরে আসে গত বছরের স্মৃতি। শ্রীমতিয়া মাহাতো যেমন বলছেন, “মানুষটাই চলে গেল। আমারছোট ছেলের দিনমজুরির আয়ে এখন সংসার চলে। আগে তিন জনে এক সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যেতাম। পুজোর বাজারও এক সঙ্গে করতাম। আর সে সব মনে করতে চাই না।”

বিষমদ কাণ্ডে মৃত্যু হয় কৃষ্ণ মাহাতো এবং তাঁর মা ভালোয়া মাহাতোর। কৃষ্ণর ছেলের বয়স সাত, মেয়ের পাঁচ। তাদের জামাকাপড়ও কেনা হয়নি। কৃষ্ণর স্ত্রী আশা বলেন, “এখন দিনমজুরি করে সংসার চালাই। ওদের বাবা প্রতি বছর পুজোর জামা কিনে আনত। এখন সে নেই, বাজারও হয়নি। এ বছর আর মণ্ডপে যাব না।”

বিষমদ কাণ্ডে মৃত্যু হয়েছিল লখিয়া মাহাতো এবং তাঁর ভাই চন্দনেরও। চন্দনের বিরুদ্ধেই সে দিন বিষমদ বিক্রির অভিযোগ ছিল। চৌধুরীপাড়ার একপ্রান্তে বাড়ি তাঁদের। সেখানেও চিত্র একই। লখিয়ার ছেলের বয়স চার, মেয়ে দেড় বছরের। অন্য দিকে, সাড়ে চার বছরের ছেলে আর ছয় মাসের মেয়েকে নিয়ে চন্দনের স্ত্রী লছমিনিয়ে দিন কয়েকের জন্য গিয়েছেন বাপের বাড়ি। লখিয়ার স্ত্রী সঙ্গীতা বলেন, “বিয়ের সাত বছরে প্রতি বারই স্বামীর সঙ্গে ঠাকুর দেখেছি। এ বার বাচ্চাগুলোর জামা কেনা হয়নি, ঠাকুর দেখতেও যাওয়াও হবে না।” দুই ছেলেকে হারিয়েছেন, তার উপর মেয়ে গুছিয়া মাহাতোকে বিষমদ কাণ্ডে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সব হারানো চন্দ্রাবতী মাহাতো ধরা গলায় হাহাকার করেন, “কোথা থেকে যে কী হয়ে গেল! সংসারটাই ছাড়খাড় হয়ে গেল।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement