বিপুল ভিড় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রোড শোতে। ছবি: সুজাউদ্দিন বিশ্বাস, গৌতম প্রামাণিক
মাস তিনেক আগেই সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে শাসক দল তৃণমূলের। সেখানকার সংখ্যালঘুদের একাংশ শাসকদলের পাশ থেকে সরে গিয়েছে বলে কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বলতে শুরু করেছে। এই আবহে শুক্রবার তৃণমূলে ‘নবজোয়ার’ এই জনসংযোগ যাত্রায় মুর্শিদাবাদে প্রবেশ করেছেন তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ফরাক্কা থেকে সুতি, জঙ্গিপুর সর্বত্রই জনজোয়ারে ভেসেছে অভিষেকের রোড শো। ভিড়ের প্রভাব ভোটে পড়বে বলে আশা তৃণমূলের।
শনিবারও লালবাগ থেকে শুরু করে দৌলতাবাদ, ইসলামপুর সর্বত্রই ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। রবিবারও মুর্শিদাবাদ থেকে শুরু করে বহরমপুর, রেজিনগর, নওদা, হরিহরপাড়ার রোড শো, জনসভায় ভিড় উপচে পড়েছে। অভিষেকের সভায়, রোড শোয়ে এত জনজোয়ার হচ্ছে কী করে সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মুর্শিদাবাদের আনাচে কানাচে।
সূত্রের খবর, সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। দাবি, আর তাতে টিকিট পেতে মরিয়া শাসকদলের ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের দলের নেতাকর্মীরা। তাই নিজেদের জনসমর্থন দেখাতে নিচুতলার নেতারা অভিষেকের সভা সমিতিতে লোক জড় করেছেন। যে যত লোক দেখাতে পারবেন, তার পক্ষেই টিকিট মিলতে পারে এমন আশাতেই নেতারা প্রতিযোগিতা করে অভিষেকের কর্মসূচিতে লোক পাঠিয়েছেন। তবে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছে, মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমূল ছাড়া অন্য কোনও দলের অস্তিত্ব নেই। বিরোধীরা সাইনবোর্ডে পরিণত হয়েছে। দলের সর্ব ভারতীয় নেতৃত্ব জেলায় এসেছেন। তাই তাঁকে কাছ থেকে দেখতে জনসমাগম হওয়াটাই স্বাভাবিক।
যদিও বিজেপির দক্ষিণ মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি শাখারভ সরকার বলেন, ‘‘বাইরে থেকে লোকজন এনে ভিড় দেখাচ্ছে তৃণমূল। কোনও একটি ব্লকে কর্মসূচি রাখছে। আর সেখানে গোটা জেলার কর্মী সমর্থকদের পাশাপাশি পড়শি জেলার লোকজন এনে জড়ো করছে। এ ভাবে লোক জড়ো করে ভিড় দেখিয়ে লাভ হবে না।’’
জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘তৈমুর লঙের ঘোড় সওয়ার বাহিনী এবং তাঁবু দেখতে লোকজন ভিড় করতেন। কিন্তু মানুষ তাকে জনসমর্থন করেননি। তৈমুর লং গায়ের জোরে অধিকার অর্জন করেছিল। অনুরূপ ভাবে তৃণমূলের ‘নবজোয়ারে’ লোক লস্কর, তাঁবু, গাড়ির কনভয় দেখতে লোকজন যাচ্ছেন। সরকারি সংস্থার লোকজনকে বাধ্যতামূলক ভাবে রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটা মানে জনসমর্থন নয়।’’
শনিবার মুর্শিদাবাদ শহর লাগোয়া কাটরা মসজিদের কাছে অভিষেকের কনভয় নির্ধারিত সময়ের দু’ঘণ্টা পরে পৌঁছয়। সেখানেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মুর্শিদাবাদ জিয়াগঞ্জ ব্লকের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সেখানে বহরমপুর, বেলডাঙ্গা, ভগবানগোলা সহ আশপাশের অনেক কর্মী সমর্থককে দেখা গিয়েছে. তারা কেউ টোটো, কেউ বাসে, কেউবা ব্যক্তিগত গাড়িতে সেখানে পৌঁছেছেন।শনিবার দুপুরে দৌলতাবাদের নয় মাইল থেকে থানার মোড় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রোড শো হয়েছে। সেখানেও ভিড় উপছে পড়েছিল। বহরমপুর ব্লকের বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি হরিহরপাড়ার একাংশের এবং দৌলতাবাদ এলাকার দলীয় নেতাকর্মীরা ওই রোড-শো-এ ভিড় জমিয়েছিলেন। সেখানে টোটো, অটো, লরি, বাস ব্যক্তিগত গাড়িতে করে নেতাকর্মীরা গিয়েছিলেন। যে যার দায়িত্ব এসেছিলেন সে নেতারা কর্মীদের টিফিনের প্যাকেট তুলে দিয়েছেন। রবিবারও মুর্শিদাবাদ, বহরমপুর, বেলডাঙা রেজিনগর নওদা হরিহরপাড়ায় একই ভাবে তৃণমূল লোক জমায়েত করেছে।জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, ‘‘দল থেকে চাপ ছিল অভিষেকের সভায় লোক জড়ো করার। সে জন্য সবাই যে যত বেশি পারেন লোক পাঠিয়েছেন।’’জেলা তৃণমূল নেতা অশোক দাস বলছেন, ‘‘আমাদের নেতার কর্মসূচিতে ভিড় দেখে ভয় পেয়ে বিরোধীরা ভুল বকছেন। আমাদের দলের লোক আছেন, তাই নেতাকে কাছ থেকে দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন।’’