ভ্যানে আনাজ নিয়ে । নিজস্ব চিত্র
টিনের বড়সড় ডাব্বা, তার গায়ে গায়ে ছোট ছোট কৌটো। কোনটায় জিরে গুঁড়ো, লঙ্কা কুচি, পেঁয়াজ কুচি, চানাচুর, লম্বা ফালি নারকেল। বারো বছর ধরে পরিপাটি সংসার। লালগোলা শিয়ালদহ লাইনে ট্রেন বন্ধ আজ দশ দিন। সারা দেশে লকডাউনের ছায়ায় থমকে গিয়েছে সেই কৌটোর সংসারও!
ঝন্টুর ঝালমুড়ি খাওয়ার কেউ নেই আর। ভোরের ট্রেনে ঝালমুড়ি আর সন্ধের ফিরতি গাড়িতে ফুরনো নারকেল, নাহ আর চায় না কেউ। ট্রেন বন্ধ থাকলে পেট তো চলবে না, অভাবের সংসারে তাই বিকল্প আনাজ নিয়ে বসছেন ঝন্টু। আনাজে ছাড় রয়েছে। তাই আলু-পটলের কারবারে একটা নতুন জীবনের খোঁজ করছেন বটে, কিন্তু অনভ্যস্ত সেই আনাজ বিক্রেতার পসরা তেমন জমে না।
বেলডাঙার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ২২ পল্লি লাগোয়া পাড়ায় বাস ঝন্টু ঘোষের। বারো বছর ধরে লালগোলা প্যাসেঞ্জারের এ কামরা থেকে ও কামরায় ফিরি করে বেড়ানো ঝন্টুকে স্থবির আনাজের ঝুড়ির সামনে দেখে পাড়ার লোকজন তাই বলছেন, ‘‘বসে থাকতে ভাল লাগছে!’’ ঝন্টু ফ্যালফ্যাল করে মাথা নাড়ে।
রোজগারে ছেদ পড়ায় ভেবে কুল পাচ্ছেন না, কবে আবার সেই ফিরিওয়ালার ছুটন্ত জীবনে ফিরবেন। তিনি বলছেন, ‘‘মনটা বড় আকুলি বিকুলি করে, ট্রেনের হুইসল না শুনলে মনে হয় সব অচেনা। দাদা, জানেন, কবে চালু হবে ট্রেন!’’
বাড়িতে একটা লজঝড়ে পুরনো ভ্যানরিকশা রয়েছে। তার ওপর কাঠের পাটাতন বিছিয়ে পড়শির কাছে কিছু টাকা ধার করে শুরু করেছেন আনাজের ব্যবসা। খুব সকালে উঠে বেলডাঙার রেল বাজারের পাইকারি বাজার থেকে আনাজ কিনে সেই আনাজ ভ্যানে চাপিয়ে বিক্রি হচ্ছে। কখনও বাড়িতে বাড়িতে, কখনও রাস্তার মোড়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে। আগের সেই চেনা লব্জ এখন উধাও। অপটু গলায় এখন লাউ-কুমড়ো-টোম্যাটো-লঙ্কা, হাঁক পাড়ছেন বটে কিন্তু তেমন ঝাঁজ নেই তাতে।
ঝন্টু বলেন, “এত দিন ধরে ঝালমুড়ি বিক্রি করছি তো, আনাজে তেমন জুত করতে পারছি না। সেই বিক্রিবাটাও তেমন হচ্ছে না। কোনওরকমে চলছে।’’ শুধু অপেক্ষা করে আছেন, আবার কবে ট্রেনের কামরায় ফিরবেন।