স্ট্যান্ডে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে বাস। নিজস্ব চিত্র
কখনও দু’ঘণ্টা, কখনও বা তারও বেশি। চড়া রোদে এত সময় দাঁড়িয়ে থাকলেও দেখা মিলছে না বাসের। দূরপাল্লা তো বটেই, শহরের মধ্যেও বাস হাতেগোনা। ফলে অনেকে ধৈর্য হারিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। আর খুব জরুরি হলে অন্য কোনও উপায়ে বেশি টাকা গুনে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। আনলক পর্বে জেলার সার্বিক চিত্রটা মোটামুটি এ রকমই।
দোকান বাজার খুলে গিয়েছে। পুরনো ছন্দে ফিরতে শুরু করছে মানুষের জীবন। প্রয়োজন পড়েছে যাতায়াতের। কিন্তু রাস্তায় বাস এত কম যে, যাতায়াত দুষ্কর হয়ে উঠেছে। জেলার সর্বত্র না-হলেও সেই সুযোগে বেশি ভাড়া হাঁকাচ্ছেন অটো-টোটো চালকেরা। লাগাম থাকছে না যাত্রী তোলাতেও।
প্রশাসন ও বাস মালিক সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়ায় সোমবার থেকে বাস চলা শুরু করেছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। ওই দিন পরীক্ষামূলক ভাবে কৃষ্ণনগর-করিমপুর রুটে একটা বাস চলেছিল। বেতাই-পলাশি, রানাঘাট-কালনাঘাট ও রানাঘাট-বলাগড়ঘাট রুটে একটা করে বাস চলেছিল। যাত্রী না-হওয়ায় বাস চালাতে রাজি হননি মালিকরা। বাস মালিকদের কথায়, কৃষ্ণনগর থেকে করিমপুর পর্যন্ত বাস চালালে তেল লাগে ২৮০০ টাকার মতো। সেখানে প্রথম দিন করিমপুর যাওয়ার সময় ২২০০ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। আর ফেরার সময় ২০০ টাকা। অর্থাৎ যাতায়াতে ৫৬০০ টাকার তেল খরচ হলেও টিকিট বিক্রি হয়েছে মাত্র ২৪০০ টাকা। নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি কুণাল ঘোষ বলেন, “তেল খরচেরই অর্ধেক উঠছে না। তার উপরে কর্মীদের বেতন আছে। সে কারণে অনেকে বাস চালাতে চাইছেন না।” তাই হাতেগোনা বাস চলছে। শুক্রবার যেমন কৃষ্ণনগর-মালদহ রুটে একটা বাস চলেছে। কৃষ্ণনগর-মায়াপুরের হুলোরঘাট রুটে চলেছে দুটো বাস। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে নগণ্য।
প্রশাসন সূত্রে খবর, নদিয়া জেলায় প্রায় ৫৫টি রুট আছে। বাস চলে প্রায় এক হাজার। যার মধ্যে শুধু কৃষ্ণনগর থেকেই ছাড়ে প্রায় সাড়ে ছশো বাস। এখন দু-তিনটে রুটে একটা দুটো করে বাস চলছে। হয়রান হতে হচ্ছে মানুষকে। রাম দেবনাথ নামে তেহট্টের এক ব্যক্তি বলেন, “চাপড়ায় অফিস। বাস এত কম যে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।” শুক্রবারও রানাঘাটে কোনও রুটের বাস চলেনি। বাসমালিকদের দাবি, যাত্রী হচ্ছে না, সে কারণে বাস বন্ধ। চাকদহে মাত্র একটি বাস চলছে। একই ছবি করিমপুরেও। জেলার বাস মালিক সমিতির সভাপতি কুণাল ঘোষ বলছেন, “আমরা তো বাস চালাতে রাজি। কিন্তু যাত্রী নেই। তেল খরচের অর্ধেকই উঠছে না।”
টোটো বা অটোর ক্ষেত্রেও ছবিটা মোটামুটি একই রকম। যাত্রী না-মেলায় অটো বা টোটো চালিয়ে লাভের মুখ তেমন দেখতে পাচ্ছেন না চালকেরা। করিমপুর, রানাঘাট, পলাশিপাড়া সর্বত্র এক রা। টোটো বা অটো যেতে চাইলে ‘রিজার্ভ’ করতে হচ্ছে যাত্রীদের। তবে অভিযোগ, কোথাও কোথাও দূরত্বের বিধি না-মেনে যাত্রী তোলা হচ্ছে। ভাড়াও বেশি নেওয়া হচ্ছে।