উৎপলকে নিয়ে বন্ধুপ্রকাশের বাড়িতে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
রাত প্রায় ২টো, অঝোর বৃষ্টি। জিয়াগঞ্জের লেবুবাগান এলাকায় বন্ধুপ্রকাশের বাড়ি ঘিরে থাকা জিয়াগঞ্জ থানার জনা পাঁচেক পুলিশকর্মী বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ঠাঁই নিয়েছেন পাশের কৃষ্ণমন্দিরে। এমন সময় মসজিদের পাশে এসে দাঁড়ায় সাদা রঙের তিনিট স্করপিয়ো সঙ্গে একটি লাল সুমো। গাড়ি এসে দাঁড়ানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই, বাড়ি ঘিরে ফেলেন কমব্যাট ফোর্সের জনা কয়েক জওয়ান। নিমেষে বন্ধুপ্রকাশের বাড়ি ঘিরে ফেলেন তাঁরা। ভিজতে ভিজতে এক পুলিশকর্মী বাড়ির মধ্যে গিয়ে দ্রুত আলো জ্বালিয়ে দিয়ে হাঁক পাড়েন, ‘‘সব ঠিক আছে স্যর, পাঠান।’’
বুধবার রাতে, গাড়ির আওয়াজে ততক্ষণে ঘুম ভেঙে গিয়েছে পাড়া পড়শির। জানলা থেকে মোবাইলে ছবি তোলারও চেষ্টা শুরু করেছেন কয়েক জন, উড়ে এল ধমক— ‘উঁহু কেউ ছবি তুলবেন না। না, কোনও সিভিক পুলিশও নয়।’
তার পরেই মুখ ঢেকে বগলদাবা করে লালরঙের একটি গাড়ি থেকে বন্ধুপ্রকাশের বাড়ির সামনে উৎপলকে নামালেন কয়েক জন পুলিশকর্মী। মুখ ঢাকা গামছাটা সরিয়ে দিতেই থমকে দাঁড়াল ছেলেটি, ‘‘ভয় করছে স্যর, একা ওই বাড়িতে ঢুকতে পারব না!’’ সাহস জোগান সঙ্গী পুলিশ অফিসার,
—ভয়ের কী আছে, আছি তো আামরা।
উৎপলের গলা কাঁপছে, ‘‘না স্যর, আবার এই বাড়িতেই আনলেন, এত রাতে, ঢুকতে ভয় লাগছে খুব।’’ তদন্তকারী অফিসার উৎপলকে ভরসা দিয়ে বলেন, ‘‘ভয়ের কী আছে, সেই দিন কী করেছিলি, আর একবার করে দেখা, ব্যস আর কিছু করতে হবে না।’’
দশমীর সকালে যে কাণ্ড ঘটাতে মিনিট সাতেক সময় নিয়েছিল, বুধবার রাতে তা করতে রীতিমতো কেঁপে-ঘেমে-নেয়ে একসা হয়ে যায় সে বলে পুলিশকর্মীরা জানান।
শুধু তাই নয়, পুনর্নির্মাণের প্রতিটি ধাপেই তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আর পারছি না স্যর, আর কখনও এ কাজ করব না!’ এমনকি শেষ দিকে হাঁফিয়ে উঠে সে ফের বলতে তাকে, ‘‘আমাকে ফাঁসি দিন স্যর, ফাঁসি!’
এমনকি, বন্ধুপ্রকাশের ছ’বছরের ছেলে অঙ্গনকে লক্ষ্য করে রামদা চালানোর সেই মুহূর্তটি দেখানোর সময় ঝুপ করে বসে পড়ে সে, বলে, ‘পারব না স্যর আর দেখাতে পারব না!’
পুলিশ জানিয়েছে, তার পর থেকেই গত দু’দিন ধরে কাগজ পড়া ছাড়া আর বিশেষ কথা বলছে না সে। বন্ধুপ্রকাশের ফোনের হদিস চাইলে বারবারই মাথা নেড়ে সে জানিয়ে দিয়েছে, ‘জানি না, বললাম তো জানি না।’