প্রতীকী ছবি।
একাধিক বার পরিকল্পনা করা হয়েছে, কিন্তু রাজ্যে প্রশাসনের সর্বস্তরে বা সমস্ত কাজের জায়গায় বাংলা ভাষার ব্যবহার আজও বাস্তবায়িত হয়নি।
বাম সরকার এ ব্যাপারে একাধিক বার উদ্যোগী হয়েছিল। অফিস, থানা, আদালত সর্বত্রই চালু হয়েছিল বাংলা। যুতসই প্রতিশব্দ খোঁজার কাজও এগিয়েছিল। কিন্তু বেশি দিন তা স্থায়ী হয়নি। তৃণমূল সরকারও তেমন ভাবে কখনও এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ।
প্রতিবেশী বাংলাদেশের উদাহরণকে সামনে এনে এখন অনেকেই কাজের জায়গায় বাংলার দাবি করতে শুরু করেছেন। বিশিষ্ট কবি দেবদাস আচার্য যেমন বলছেন, “ষাটের দশকের গোড়ার দিকে সরকারি কাজ র্মের জন্য বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। সেটা বিধানসভায় পাশও হয়ে ছিল। সেই সময় বিষয়টি নিয়ে সমীক্ষা হয়েছিল। সেটি করেছিলেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তিনি একটি প্রশ্ন-উত্তরের ফরম্যাট নিয়ে মহাকরণের কর্মী-আধিকারিকদের মধ্যে বিলিও করেছিলেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উত্তর এসেছিল, চিঠির খসরা তৈরিতে বাংলায় প্রতিশব্দ পাওয়া মুশকিল।
দেবদাসবাবু আরও বলেন, “বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের মন্ত্রী থাকার সময় একবার উদ্যোগী হন। সেই মতো সরকারি দফতরগুলিতে নির্দেশিকাও এসেছিল। বলা হয়েছিল আমি নিজে সেই সময় কৃষি দফতরে চাকরি করতাম। তখন বেশ কয়েকটি বাংলায় চিঠিও লিখেছিলাম। কিন্তু নানা কারণে সেই চেষ্টাও স্থায়ী হয়নি।”
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকরি কর্মচারি ফেডারেশনের জেলা কমিটির উপদেষ্টা সাধন ঘোষ বলছেন, “বিগত দিনে বাম সরকার এক বার চেষ্টা করেছিল বাংলা ভাষাকে সরকারি কাজের ভাষা হিসাবে ব্যবহার করার। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। ব্যর্থ হয়। এটা আবার চালু হলে খুব ভাল হয়।”
শুধু প্রশাসনিক স্তরেই নয়, আদালতেও চালু হয়ে গিয়েছিল বাংলা ভাষা। সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক তথা আইনজীবী সামসুল ইসলাম মোল্লা বলছেন, “তখন রাজ্যের আইনমন্ত্রী নিশীথ অধিকারী। আদালতের কাজেও শুরু হয়েছিল বাংলা ভাষার ব্যবহার। বিচারকেরাও অনেকে রায়দান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার করতে শুরু করেন। কিন্তু পরবর্তী কালে তর্জমা সংক্রান্ত সমস্যার কারণে সর্বস্তরে উদ্যম হারিয়ে যেতে শুরু করে। আবার বিষয়টি নিয়ে ভাবা দরকার।”
একই দাবি করছেন কৃষ্ণনগর আদালতের ‘ফোরাম অফ বার অ্যাসোসিয়েশনে’র যুগ্ম সম্পাদক তথা তৃণমূলের জেলা মুখপাত্র দেবাশিস রায়। তিনি বলছেন, “ইংরেজি থেকে বাংলায় তর্জমা করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেওয়ায় চেষ্টাটি হারিয়ে যেতে থাকে।” দেবদাসবাবু অবশ্য বলেন, “বাংলাদেশ পেরেছে। তারা কাজের ক্ষেত্রে নিজেদের মতো পরিভাষা তৈরি করে নিয়েছে। আসল আমাদের উদ্যোগের অভাব।”