ছোট জা ঝর্না সর্দার লড়ছেন বিজেপির হয়ে (বাঁ দিকে)। বড় জা দীপালি সর্দার তৃণমূল প্রার্থী (ডান দিকে)।
হাতে হাত মিলিয়ে কাজ সারছেন দু’জনে। কারও কাজ একটু বেশি হলে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছেন অন্য জন। কারণ, বিকেল হলে একসঙ্গেই বেরোতে হবে দু’জনকে। তবে বাড়ির বাইরে বেরোলে তাঁরা আক্রমণ শানাচ্ছেন একে অপরকে। কারণ, দু’জন পৃথক রাজনৈতিক দলের প্রার্থী। সম্পর্কে তাঁরা দুই জা। নদিয়ার পলাশিপাড়া এলাকার হাঁসপুকুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের নতিপোতা গ্রামে দুই প্রার্থীর লড়াই তাই উপভোগ্য হয়ে উঠেছে ভোটারদের কাছে।
বড় জা দীপালি সর্দার তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে ছোট জা ঝর্না সর্দারকে টিকিট দিয়েছে বিজেপি। সিপিএম ওই বুথে প্রার্থী দিলেও আসল লড়াই আসলে দুই জায়ের মধ্যে। তবে দুই জা-ই বলছেন, ভোটের ফল যাই হোক না কেন, তার প্রভাব সংসারে পড়বে না। তার আঁচ পড়তে দেবেন না ব্যক্তিগত সম্পর্কেও।
তেহট্ট-২ ব্লকের হাঁসপুকুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের নতিপোতা গ্রামের ১২২ নম্বর বুথের ভোটার সংখ্যা ১,৪০১ জন। মহিলা সংরক্ষিত ওই বুথে দুই রাজনৈতিক দলের প্রার্থী একই পরিবারের। সর্দার ঘরের দুই জা তাঁদের সংসার সামলে প্রচার নামেছেন। দীপালির স্বামী লক্ষ্মণ সর্দার তৃণমূলের অনেক দিনের কর্মী। তেমনই ঝর্নার স্বামী তাপস সর্দার বেশ কিছু দিন হল বিজেপি করেন। দুই ভাইয়ের দাবি, তাঁরা দুই দলের কর্মী হলেও কোনও দিন রাজনৈতিক কারণে বাড়িতে অশান্তি হয়নি। দুই ভাই বলছেন, তাঁদের স্ত্রীরা আলাদা দলের হয়ে ভোটে লড়ছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁদের সুসম্পর্ক বজায় থাকবে।
প্রচারে যাওয়ার আগে সংসারের কাজ ভাগাভাগি করে শেষ করেন তৃণমূল এবং বিজেপি প্রার্থী। দীপালির কথায়, ‘‘অসুস্থ শাশুড়িকে স্নান করানো এবং খাওয়ানোর দায়িত্ব আমার। তবে যে দিন আমার দেরি হয়ে যায় সে দিন আমার জা সামলে দেয়।’’ নিজের আট বছরের মেয়ের খাওয়াদাওয়া, পড়াশোনা— সমস্ত কাজ গুছিয়ে দিয়ে প্রচারে বার হন দীপালি। তিনি বলেন, ‘‘মানুষের সাড়া পাচ্ছি। তাই এই নির্বাচনে আমি জিতবই।’’ অন্য দিকে ঝর্না বলেন, ‘‘আমি বিজেপি সমর্থক। তাই দল যখন প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিল, আর না করতে পারিনি। তবে এই জন্য আমাদের দুই জায়ের কোনও রকম মনোমালিন্য হয়নি। আমি মনোনয়ন দিতে যাওয়ার সময়ও বৌদির আশীর্বাদ নিয়েছি। আমার আশা, আমিই জিতব।’’