সংরক্ষণ করা হচ্ছে বৃষ্টির জল।
ভূগর্ভস্থ জলস্তর ক্রমশ নীচে নামছে। যার আঁচ পড়েছে মুর্শিদাবাদেও। মুর্শিদাবাদের ২৬টি ব্লকের মধ্যে ১৭টি ব্লক বিপজ্জনক ও আংশিক বিপজ্জনক তালিকায় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পরিবেশবিদ থেকে প্রশাসনের কর্তারা সকলেই জল সংরক্ষণে জোর দিতে বলেছেন। এমন কঠিন পরিস্থিতি উপলদ্ধি করে সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বৃষ্টির জল ও মিড ডে মিলের হাত ধোওয়ার জল সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছে হরিহরপাড়ার ট্যাংরামারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বেলডাঙার আন্ডিরণ প্রাথমিক বিদ্যালয়।
যা শুনে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মণ্ডল বলছেন, ‘‘প্রশংসনীয় এমন উদ্যোগের জন্য আমরা ওই স্কুল দু’টিকে পুরস্কার দেব। এই দু’টি বিদ্যালয়ের মতো অন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ মানুষও জল সংরক্ষণে এগিয়ে আসুন।’’
হরিহরপাড়া ব্লকের ব্যবস্থাপনায় ট্যাংরামারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃষ্টির জলকে সংরক্ষণের জন্য বিদ্যালয় চত্বরে ইট দিয়ে চেম্বার তৈরি করা হয়েছে। তাতে নুড়ি, পাথর, বালি, কয়লার স্তর তৈরি করে একটি পাইপলাইনের মাধ্যমে স্কুল ভবনের ছাদের সঙ্গে ওই চেম্বারের সংযোগ করা হয়েছে।
বৃষ্টি হলেই ছাদের জল পাইপলাইন দিয়ে চেম্বারে পৌঁছবে। পরে বিভিন্ন স্তর পেরিয়ে জল পরিস্রুত হয়ে ভূগর্ভে পৌঁছে যাবে। স্কুলের ব্যবহৃত জল, বিশেষ করে খাবার আগে ও পরে হাত ধোওয়ার জল, মিডডে মিলের বাসন ধোওয়ার জল ব্যবহার করা হচ্ছে স্কুলের আনাজ চাষে এবং ফুলের বাগানে।
অন্যদিকে আন্ডিরণ প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই ভাবে বৃষ্টির জলকে ধরে পাইপলাইন ও চেম্বারের মাধ্যমে ভূগর্ভে পাঠানো হচ্ছে। পাম্পের সাহায্যে মাটিরতলার জল জলাধারে জমা হয়। জলাধার উপচে অনেক সময় মাটিতে জল পড়ে। কিন্তু সেই উদ্বৃত্ত জলও পুর্নব্যবহার করা হচ্ছে। পাইপলাইনের মাধ্যমে দেওয়ালে ঝুলন্ত ফুলের গাছে সেই জল দেওয়া হচ্ছে। আন্ডিরণ প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, “ভূগর্ভের জল ক্রমশ কমে আসছে। তাই জল সংরক্ষণ করা হচ্ছে।’’
হরিহরপাড়ার জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার বোদিউজ্জামান বলেন, ‘‘এই পদ্ধতিতে বৃষ্টির জল পরিস্রুত হয়ে ভূগর্ভে পৌঁছে জলস্তর স্বাভাবিক রাখবে।’’ ট্যাংরামারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম অধিকারী বলছেন, ‘‘ ব্লকে প্রথম আমাদের বিদ্যালয়েই আমরা বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করার চেষ্টা করছি। তাছাড়া জল অপচয় না করে উদ্বৃত্ত জল আনাজ বাগানে সেচের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।’’
সূত্রের খবর, হরিহরপাড়া বিডিও অফিস থেকে এই প্রকল্পের জন্য ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য করা হয়েছে। মাস খানেক আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। হরিহরপাড়ার বিডিও পূর্ণেন্দু সান্যাল বলছেন, ‘‘ব্লকে প্রথম এই স্কুলকে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের জন্য ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থ বছরে এই ধরনের আরও প্রকল্প নেওয়া হবে।’’