—ফাইল চিত্র
ভাকুড়ির রাজীব মণ্ডল মোটরবাইক নিয়ে ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, তাঁর মোটরবাইক কোন দূষণ সূচকের তার তথ্য পরিবহণ দফতরের ওয়েবসাইটে আপলোড করা নেই। তাই তিনি ধোঁয়া পরীক্ষা করাতে পারেননি। পরে তাঁকে প্রথমে ছুটতে হয় মোটরবাইকের শোরুমে। সেখান থেকে শংসাপত্র সংগ্রহ করে পরিবহণ দফতরে কাগজপত্র জমা দেন। সম্প্রতি সেই তথ্য অনলাইনে আপলোড হয়েছে। দিন কয়েক আগে তিনি বাইকের ধোঁয়া পরীক্ষা করাতে পেরেছেন।
পেশায় শিক্ষক রাজীব মণ্ডল বলছেন, ‘‘উদ্যোগটা ভাল। কিন্তু প্রশাসন এ বিষয়ে আগে থেকে প্রচার ও সচেতন করলে এমন ভোগান্তি পোহাতে হত না।’’ রাজীবের মতো বহু গাড়ির মালিক ও চালকদের অভিযোগ, আগাম সচেতন না করে এমন নিয়ম চালু করায় চূড়ান্ত হয়রান হতে হচ্ছে। আবার পুলিশ ধরলে জরিমানাও দিতে হচ্ছে।
বহরমপুরের আর এক গাড়ি মালিক প্রকাশ সাহা বলছেন, ‘‘দিন তিনেক আগে পরিবহণ দফতরে কাগজপত্র জমা দিয়েছি। কিন্তু এখনও তা ওয়েবসাইটে ওঠেনি। ফলে বৃহস্পতিবারেও ধোঁয়া পরীক্ষা করাতে গিয়ে ফিরতে হয়েছে। আগে থেকে সচেতন করলে এমন ঝঞ্ঝাট হত না।’’
যদিও আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের কর্তাদের দাবি, জেলা জুড়ে সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ কর্মসূচি-সহ দফতরের নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচির সময় ধোঁয়া পরীক্ষার নয়া নিয়মের বিষয়েও সচেতন করা হয়েছে। যা শুনে ক্ষুব্ধ গাড়ি মালিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, পরিবহণ দফতরের লোকজন মনে মনে প্রচার করে থাকলে তাঁদের আর কিছু
বলার নেই!
বায়ু দূষণের কোন সূচকের (ভারত স্টেজ) গাড়ি তা পরিবহণ দফতরের ওয়েবসাইটে তোলা থাকলেই ধোঁয়া পরীক্ষা করা যাবে। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে এই নির্দেশিকা কার্যকর হয়েছে। যার জেরে বিপাকে পড়েছেন বহু গাড়ির মালিক ও চালক। অনেক গাড়িরই দূষণ সূচক-সহ অন্য তথ্য পরিবহণ দফতরের ওয়েবসাইটে তোলা নেই। ফলে তাঁরা ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে হয়রানি হয়ে ফিরছেন। অন্যদিকে ধোঁয়া পরীক্ষার শংসাপত্র না পেলে পুলিশ জরিমানাও
আদায় করছে।
যদিও মুর্শিদাবাদের আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের আধিকারিক সিদ্ধার্থ রায় বলছেন, ‘‘গাড়ির মালিকেরা আমাদের কাছে আবেদন করলেই আমরা গাড়ির দূষণ সূচক ওয়েবসাইটে আপলোড করে দিচ্ছি। যাঁদের তথ্য দেওয়া নেই তাঁদের পরিবহণ দফতরে আবেদন করতে বলা হচ্ছে। আমরা এ ব্যাপারে ফের প্রচার শুরু করব।’’
আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ধোঁয়া পরীক্ষা অনলাইনে করা হচ্ছে। যা এত দিন অফলাইনে হত। অনলাইনে ধোঁয়া পরীক্ষার পরে তা পরিবহণ দফতরের ওয়েবসাইটে চলে যাচ্ছে। ফলে পুলিশ, প্রশাসন থেকে পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরাও সহজেই দেখে নিতে পারছেন গাড়ির ধোঁয়া পরীক্ষা করা আছে কি না। আগের নিয়মে তথ্য বিকৃতির সুযোগ থাকত। কিন্তু নয়া নিয়মে সেই সুযোগ থাকবে না।
মুর্শিদাবাদে ৭১টি ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে ৬১টি ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্র অনলাইনে কাজ শুরু করেছে। বাকিদেরও শীঘ্রই অনলাইনে ধোঁয়া পরীক্ষা চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলা ধোঁয়া পরীক্ষা কেন্দ্র ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কমল সুর বলছেন, ‘‘গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে অনলাইনে ধোঁয়া পরীক্ষা শুরু হয়েছে। যাঁদের গাড়ির তথ্য অনলাইনে নেই তাঁদের পরিবহণ দফতরে আবেদন করতে বলছি।’’
আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, গাড়ির ব্লু-বুক, রোড ট্যাক্সের নথিপত্র, বিমার নথিপত্র এবং যে শোরুম বা কোম্পানি থেকে গাড়ি কেনা হয়েছে সেখান থেকে কোন দূষণ সূচকের গাড়ি তার শংসাপত্র নিয়ে জমা দিতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে মুর্শিদাবাদে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরে হাজার দুয়েক এমন আবেদন জমা পড়েছে। তার মধ্যে এক হাজার আবেদনের তথ্য অনলাইনে তোলা হয়েছে।
বহরমপুরের একটি মোটরবাইক শোরুমের জেনারেল ম্যানেজার তাপস দে বলছেন, ‘‘আমাদের কোম্পানির গাড়ি যাঁরা কিনেছেন এবং যাঁদের দূষণ সূচকের শংসাপত্র প্রয়োজন হচ্ছে তাঁরা ব্লু-বুক নিয়ে এলেই শংসাপত্র দিচ্ছি।’’