যানজটই রোজনামচা বহরমপুরের। —নিজস্ব চিত্র।
প্রাথমিক টেট পরীক্ষা শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগেও যানজটে থমকে থাকল বহরমপুরের নাগরিক জীবন। একে অপরকে টেক্কা দিয়ে কে কত আগে বহরমপুর বাস টার্মিনাস যেতে পারবে তার যেন এক অলিখিত প্রতিযোগিতায় সবাই নেমেছে! ফলে বাস টার্মিনাসে ঢোকার আগেই ট্র্যাফিক আইল্যান্ডকে ঘিরে তীব্র যানজট। বাস, লরি, ট্রেকার, ম্যাজিক ভ্যান, টুকটুক, মোটরবাইক মুখ এগিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আর বেজে চলেছে একটানা হর্ন। সেই সঙ্গে ঘন কালো ধোঁয়া। তাই ক্ষুব্ধ হয়ে পথচারীকে বলতে শোনা গেল, ‘‘একে তো যানজটে ফেঁসে গিয়েছি। তার উপরে হর্নের দাপটে কান পাতা দায়।’’
শহরের যানজটের এখন এটাই দস্তুর!
বুধবার যেমন সামান্য বৃষ্টিতেই বহরমপুর শহরে ব্যাপক যানজটে ফেঁসে যায় শহর। জট ছাড়িয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে শেষ পর্যন্ত বিএসএফের জওয়ানদের পথে নামতে হয়। লাঠি হাতে জওয়ানদের পথে নামতে দেখে নিমেষের মধ্যে যান চলাচল শুরু হয়। মুর্শিদাবাদের ডেপুটি পুলিশ সুপার (ট্র্যাফিক) অশেষকুমার ঝাঁ জানান, ‘‘সেই সময়ে বিএসএফের জওয়ানরা গাড়িতে চড়ে যাচ্ছিল। যানজটে তাঁদের গাড়িও আটকে থাকে। তখন যানজট ছাড়ানোর জন্য তাঁদের কাছে অনুরোধ করি। অনুরোধ মেনে তাঁরা রাস্তা যানজট মুক্ত করেন।’’
প্রশ্ন উঠেছে, এ দিন না হয় সমস্যার সমাধান হল কিন্তু প্রতিদিন তো বিএসএফ জওয়ানদের গাড়ি বহরমপুরের উপর দিয়ে যাবে না। এরই মধ্যে আগামী ৩০ অগস্ট রবিবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার দিন কী হবে? মুর্শিদাবাদ জেলায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দেড় লক্ষ। তাই শহরের ওই যানজট সামলে ওই পরীক্ষার্থীদের প্রায় তিনশোরও বেশি পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের পৌংছে দেওয়াটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কাছে।
বৃহস্পতিবার পঞ্চাননতলার দিক থেকে বহরমপুর বাসস্ট্যান্ডে ঢোকার মুখে পাশাপাশি তিনটে সারি করে বেসরকারি বাসগুলি নিয়ম ভেঙে দাঁড়িয়ে ছিল। সরকারি বাসও তাতে সামিল। উল্টো দিক থেকে যান চলাচল করবে তারও উপায় নেই, কারণ ট্র্যাফিক আইনের তোয়াক্কা না করে ততক্ষণে মোটরবাইকের ঝাঁক উল্টো দিকের মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় যানজট পাকিয়েছে। গির্জার মোড়ের দিক থেকে কোনও যান চলাচল করতে পারছে না। সব মিলিয়ে পণ্যবাহী লরি, বাস, ব্যাটারি চালিত টুকটুক, মোটরবাইক, রিকশা, রিকশা, সাইকেলের লম্বা লাইনের সারি। এমনকী পথচারীরাও যে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করবেন, তারও কোনও উপায় নেই।
এ দিকে, বহরমপুর বাসস্ট্যান্ডে ঢোকার মুখের ওই জট পঞ্চাননতলামোড় হয়ে চুঁয়াপুর মোড়ের দিকে আছড়ে পড়েছে। অন্য দিকে, ওই যানজটের কারণে গির্জামোড় হয়ে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী সেতুর উপরে থেকে খাগড়া রেলগেটের দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক তথা ভূমি সংস্কার দফতরের জেলা আধিকারিক অরবিন্দ মিনা বলেন, ‘‘টেট পরীক্ষার দু’দিন আগে থেকে যানজট মোকাবিলা করতে পুলিশ পথে নামবে। জেলা পুলিশ প্রশাসন সেই মতো পরিকল্পনাও করেছে।’’ ফলে টেট পরীক্ষার্থীদের যানজট নিয়ে কোনও রকম আশঙ্কা করার প্রয়োজন নেই বলে তিনি দাবি করেন।
টেট পরীক্ষার্থী ইভানা আখতারের পরীক্ষাকেন্দ্র পড়েছে জঙ্গিপুরে। সে ক্ষেত্রে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী সেতুর উপরের যানজট এড়াতে তিনি লালগোলা হয়ে জঙ্গিপুর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সময় বেশি লাগলেও যানজটে আটকে থাকতে হবে না, এটাই বাঁচোয়া।’’ বেসরকারি বাসের উপরেও তিনি ভরসা করছেন না। আগামী গাড়ি ভাড়া করেও রেখেছেন তিনি। আরও এক টেট পরীক্ষার্থী সুপ্রিয় দে জানান, ‘‘পরীক্ষার দিন বহরমপুর শহরের যানজট সামাল দিতে নামলে পরিস্থিতি বিগড়ে যাওয়ার সম্ভবনা বেশি। দু’দিন আগে থেকে চেষ্টা করলে তবেই পরীক্ষার দিন পরিস্থিতি উন্নত হলেও হতে পারে।’’ যদিও টেট পরীক্ষা উপলক্ষে কোনও পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত জেলা ট্র্যাফিক পুলিশ প্রশাসনের কাছে পৌঁছায়নি। অশেষবাবু জানান, ‘‘টেট পরীক্ষাকেন্দ্রীক কোনও সিদ্ধান্ত সরকারি ভাবে আমাকে এখন পর্যন্ত জানানো হয়নি।’’
জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের অফিসার এহেসান আলি জানান, ‘‘আমি বাস ও ট্রেকার মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন রুটে পরীক্ষার দিন যত সংখ্যক বেশি বাস ও ট্রেকার চালানোর অনুরোধ করেছি।’’ তিনি বলেন, ‘‘পরীক্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যানজট এড়াতে বিভিন্ন পণ্যবাহী লরিগুলিকে শহরের বাইরে কোথাও দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে আচমকা কোনও যান বিকল হয়ে পড়লে দ্রুত তা সরিয়ে নিয়ে পারে, এজন্য জেলা পুলিশ প্রশাসনের কথা মত সাতটি ব্রেকভ্যানও দেওয়া হয়েছে।’’
এত কিছু সত্ত্বেও বহরমপুরের যানজট নিয়ে আশঙ্কা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। গত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা থেকে প্রশাসন শিক্ষা যানজট মুক্ত করতে কোনও শিক্ষা নিয়েছে নাকি সেই তিমিরেই পড়ে রয়েছে, এখন সেটাই দেখার!