একাএকা বেলুনওয়ালা।
বছরের শেষ দিনে পর্যটকের আশায় বুক বেঁধে ছিলেন ওঁরা— টাঙা থেকে টোটো চালক, হাজারদুয়ারির গাইড থেকে আশপাশের ব্যবসায়ী এমনকি স্থানীয় থানায় পুলিশ ব্যরাক থেকে আনা হয়েছিল বাড়তি পুলিশ কর্মীও। বছরের শেষ সন্ধেয় রোলের দোকানে মাছি তাড়ানোর ফাঁকে স্বপন মণ্ডল বলছেন, ‘‘এমনটা কে ভেবেছিল বলুন দাদা, গোটা ডিসেম্বর আন্দোলনের ধাক্কায় পর্যটকই এল না। বছররে শেষ বিকেলটাও মাছি তাড়িয়েই কাটল!’’
নয়া নাগরিক আইনের প্রতিবাদে জেলা জুড়ে তাণ্ডবের পরে শেষ সপ্তাহের হুহু শীতে সব যখন থিতিয়ে এসেছে, লালবাগ শহরটা পর্যটকের আশা নিয়ে তাকিয়ে ছিল বর্ষশেষের দিনগুলোর দিকে। তবে সে গুড়ে বালি। শেষ দিনেও গুটিকয়ের স্থানীয় মানুষের আনাগোনা ছাড়া হাজারদুয়ারি খাঁখা করল।
এনআরসি এবং নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হতেই জেলায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ট্রেন চলাচল। ক্রমাগত সড়ক অবরোধের জেরে বাস চলাচলও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এক সময়ে। আন্দোলনের প্রভাপ পড়েছিল লালবাগেও। পরীক্ষা শেষে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীর ভিড়, সাবেক পর্যটক কেউই পা মাড়াননি জেলায়। ‘‘তবে, ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে, জেলা যখন স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার মরিয়া চেষ্টা করছে তখন মনে হয়েছিল এ বার বুঝি রুজি জুটবে কিছু’’, বলছেন হাজারদুয়ারির গাইড গোপাল দাস। কিন্তু এ দিন পর্যটক শূন্য হাজারদুয়ারির মাঠে দাঁড়িয়ে সে আশায়া মেঘ জমল তাঁদের। প্রতি বছর যেখানে হাজার পঁচিশ পর্যটক হয় হাজারদুয়ারিতে এ বার সেখানে মেরেকেটে হাজার কয়েক পর্যট এসেছেন সকাল থেকে। হাজারদুয়ারি প্যালেস মিউজিয়াম সূত্রে জানাগিয়েছে এ দিন প্রায় ২,০০০ টিকিট বিক্রি হয়েছে। প্রকৃতিতীর্থ এবং মোতিঝিলে প্রায় ৩,০০০ টিকিট বিক্রি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। গত বছর এই সংখ্য়াটাই ছিল প্রায় হাজার পনেরো।এ দিন মুর্শিদাবাদ শহর টাঙা ইউনিয়নের সম্পাদক মনু শেখ বললেন, ‘‘ভেবেছিলাম বছর শেষে মুখে হাসি ফুটবে। তা আর হল কই!’’