পথে টোটোচালকেরা। নিজস্ব চিত্র।
দিন দশেক আগে বহরমপুর শহরে বেআইনি টোটো ধরপাকড় শুরু করেছিল আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর। সে সময় দিন দুয়েক শহর থেকে টোটো একপ্রকার উধাও হয়ে গিয়েছিল। তাতে বিপাকে পড়েছিলেন শহরবাসী। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তৃণমূল পরিচালিত বহরমপুর পুরসভা তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। তার পরে বিজেপি নেতৃত্ব টোটোচালকদের পক্ষে বহরমপুরে মিছিল করেছে। টোটোচালকদের পাশে কংগ্রেসকেও দাঁড়াতে দেখা গিয়েছিল। এবারে টোটো চালকেরা যৌথ মঞ্চ গড়ে পথে নামলেন। অরাজনৈতিক সংগঠন বলা হলেও জেলা কংগ্রেস পার্টি অফিস লাগোয়া জায়গায় টোটো চালকদের যে পথসভা হয়েছে সেখানে জেলা কংগ্রেস নেতা মনোজ চক্রবর্তী, জয়ন্ত দত্ত, মহফুজ আলম ডালিম বক্তব্য রেখেছেন। জেলা কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, তাঁরা সমাজসেবী হিসেবে টোটো চালকদের সভায় গিয়ে বক্তব্য রেখেছেন।
মঙ্গলবার টোটোচালকেরা বহরমপুর শহরে মিছিল করে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরে গিয়ে স্মারকলিপি দেন। আন্দোলনকারীদের দাবি, তাঁদের নতুন করে ই-রিকশা কেনার আর্থিক ক্ষমতা নেই। তাঁদের পুরনো টোটো চালাতে দেওয়া হোক।মুর্শিদাবাদের আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক বিমলকুমার শর্মা বলেন, ‘‘ই-রিকশাকে আইনের আওতায় আনতে চাইছে পরিবহণ দফতর। আইনের মধ্য থেকে যতটা সাহায্য করা দরকার তা পরিবহণ দফতর করবে।’’
বহরমপুর শহরের টোটোচালকদের একাংশ ‘টোটো চালক জীবন জীবিকা যৌথ মঞ্চ’ তৈরি করেছেন। ওই মঞ্চের পক্ষে অমিত কুমার ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা অরাজনৈতিক মঞ্চ তৈরি করে পথে নেমেছি। বহরমপুর শহর জুড়ে টোটোচালকদের হয়রানি করা হচ্ছে। পরিবহণ দফতর থেকে অন্যায় ভাবে জরিমানা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে নতুন ই-রিকশা কিনতে হবে। আমরা কোনও রকমে এই টোটো কিনে চালাচ্ছি। নতুন করে দামি ই-রিকশা কী ভাবে কিনব। তাই আমাদের দাবি জানাতে এদিন পথে নেমেছি।’’
আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক জানান, রাজ্যের পরিবহণ দফতর কেন্দ্রীয় পরিবহণ দফতরের অনুমতিক্রমে ২৬ টি ই-রিকশা কোম্পানিকে অনুমোদন দিয়েছে। সে সব ই-রিকশার পরিবহণ দফতর থেকে রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেওয়া হবে।
আদালত অনেক আগেই টোটোকে অবৈধ ঘোষণা করে কেন্দ্রের পরিবহণ দফতর অনুমোদিত ই-রিকশা চালানোর কথা বলেছে। সেই নির্দেশ কার্যকর করতে সম্প্রতি অবৈধ টোটোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছিল মুর্শিদাবাদ আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর। যার জেরে দু’দিন শহরে টোটো চলাচল নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল। পরে অবশ্য তৃণমূল পরিচালিত বহরমপুর পুরসভা কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতায় টোটো চলাচল স্বাভাবিক হয়। সে দিন অবশ্য আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর থেকে জানানো হয়েছিল টোটো চালকেরা একমাস সময় চেয়েছেন ই-রিকশার রেজিস্ট্রেশন করানোর বিষয়ে। তাঁদের সেই আবেদন সহানূভূতির সঙ্গে দেখা হচ্ছে। তার পর থেকে অবশ্য সে ভাবে ধরপাকড় না হলেও টোটোচালকেরা আশঙ্কায় রয়েছে যে কোনও সময় ফের ধরপাকড় শুরু হতে পারে। ২০২১ সালের শেষের দিকে বহরমপুর পুরসভা ও ট্রাফিক পুলিশ বহরমপুরের জন্য টোটো ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছিল। শহরের কোন এলাকা থেকে কোন এলাকার ভাড়া কত তা ঠিক করা হয়েছিল, গ্রামীণ এলাকা থেকে আসা টোটোর ভাড়াও নির্ধারন করা হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ টোটোচালক তা মানেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও টোটোচালকেরা সে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।