রাজা শেখ। নিজস্ব চিত্র
বোমা-গুলি ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে দুষ্কৃতীরা খুন করল তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্যকে। বুধবার রাতে বহরমপুর থানার জীবন্তি হল্ট স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত তৃণমূল নেতার নাম রাজা শেখ (৩৬)। ওই যুবক কান্দি ব্লকের মহলন্দি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য। ওই অঞ্চলেরই ধলা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। মূল অভিযুক্ত ও তার সঙ্গীরা পলাতক। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। মূলত এলাকা দখল নিয়ে রেষারেষির জেরেই খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।”
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওইদিন রাতে জীবন্তি হল্ট স্টেশন থেকে ইমামুল শেখ নামে এক যুবক রাজাকে ফোন করে ডাকে। তারপর রাজা সেখানে যান। সঙ্গে ছিলেন তাঁর দু’ভাই। সেখানে ইমামুল ও তার সঙ্গীদের সঙ্গে রাজার বচসা বাধে। অভিযোগ, সেই সময় অপরপক্ষের লোকজন রাজাকে লক্ষ্য করে দু’টি সকেট বোমা ছোড়ে। কিন্তু বোমাটি বেশ কিছুটা দূরে ফাটে। এরপরই দুষ্ক়তীরা আগ্নেয়াস্ত্র থেকে খুব কাছ থেকে রাজার বুকে গুলি করে। তাতেই রাজা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ফের ইমামুলের লোকজন ধারাল অস্ত্র দিয়ে পিঠে, হাতে, পায়ে ও গলায় এলোপাথাড়ি কোপায়। ওই যুবকের দুই ভাই বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে দুষ্কৃতীরা তাদের ওপর চড়াও হয়। ধারাল অস্ত্রের ঘায়ে রাজার ভাই হানিফ শেখের হাত কেটে যায়। শেষ পর্যন্ত কোনওরকমে পালিয়ে বেঁচে যান হানিফ।
অভিযুক্তরা বহরমপুরের নিশ্চিন্তপুরের বাসিন্দা। ইমামুল তৃণমূলের সমর্থক। কয়েক বছর আগে সে জীবন্তি হল্ট স্টেশনে নিজের আধিপত্য কায়েম করেছিল। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটের রাজা পঞ্চায়েত সদস্য হওয়ার পর রাজা ওই এলাকায় নিজের আধিপত্য কায়েম করেন। গত ২৪ নভেম্বর এ নিয়ে রাজার অনুগামীদের সঙ্গে ইমামুলের অনুগামীদের হাতাহাতি হয়েছিল। সেই অশান্তির জেরেই রাজাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে তারা পরিকল্পিত ভাবে খুন করেছে বলে দাবি পরিবারের লোকজনের। প্রত্যক্ষদর্শী তথা রাজার ভাই হানিফ শেখ বলেন, “চোখের সামনে ভাইকে নৃশংস ভাবে খুন করল ইমামুল ও তার লোকজন। পুলিশকে সব জানিয়েছি।’’ তবে স্থানীয় সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত সদস্য হওয়ার পর থেকেই এলাকায় ‘ক্ষমতাবান’ হয়ে উঠেছিলেন রাজা। তাঁর দাপটে ক্রমেই জমি হারাচ্ছিল ইমামুল। সেটাই সে মেনে নিতে পারেনি। ইদানীং ইমামুল মাটি বিক্রির বেআইনি কারবারেও যুক্ত হয়ে গিয়েছিল। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে ইমামুলের দু’-একবার বিবাদও বেধেছিল বলে খবর। কান্দি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি পার্থপ্রতিম সরকার বলেন, “যারা আমাদের পঞ্চায়েত সদস্যকে খুন করল তাদের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই। ওরা দুষ্কৃতী বলেই এলাকায় পরিচিত। পরিকল্পিত ভাবে বিধানসভা ভোটের মুখে তৃণমূলকে দুর্বল করার জন্য এই খুনের রাজনীতি শুরু হয়েছে।” ঘটনাস্থল থেকে দু’টি সকেট বোমার খোল ও দু’টি কার্তুজের খোল উদ্ধার করেছে পুলিশ। জেলার পুলিশ সুপারের আশ্বাস, “শীঘ্রই অভিযুক্তরা গ্রেফতার হবে। তদন্ত চলছে।”