সত্যজিৎ বিশ্বাস।
বাড়ির কাছেই যে ক্লাবের সরস্বতী পুজোর উদ্বোধনে খুন হয়েছিলেন কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস, সেই ‘আমরা সবাই’ ক্লাব গড়ে উঠেছিল পূর্ত দফতরের জমিতে, একটি যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের উপর। শুক্রবার বিধাননগর ময়ূখ ভবনে বিশেষ আদালতে এই হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিতে গিয়ে সত্যজিতের ভাই সুমিত বিশ্বাস এমনই জানিয়েছেন।
এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বিচারক মনোজজ্যোতি ভট্টাচার্যের এজলাসে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। চলে দু’দফায় বিকেল ৪টে পর্যন্ত। অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী সুবীর দেবনাথের প্রশ্নের জবাবে সুমিত জানান, ক্লাবটি ছিল দোতলা। কৃষ্ণনগর-হাঁসখালি রাজ্য সড়ক চওড়া করার সময়ে পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা মাপজোক করে বলেছিলেন, রাস্তার প্রয়োজনে বাড়িটি ভাঙা জরুরী। কিন্তু ক্লাবটি সরানো সম্ভব হয়নি। সম্প্রসারণের কাজ হয়েছিল ঘুরপথে। তা করতে গিয়ে স্থানীয় কিছু বাসিন্দার জমি ঢুকে যায় ওই রাস্তায়। তাতে এলাকার বহু মানুষ সত্যজিতের উপর ক্ষুব্ধ হন বলে দাবি। যদিও এই ক্ষোভের বিষয়টি জেরায় অস্বীকার করেন সুমিত। সত্যজিৎ জীবিত থাকাকালীন প্রায় বছর পাঁচেক ওই ক্লাবের সম্পাদক ছিলেন রাজ্য সরকারের পরিবহণ দফতরের চুক্তিভিত্তিক কর্মী সুমিত সুমিত। বছর দেড়েক বয়সে বাংলাদেশ থেকে এ দেশে আসেন বলেও তিনি এ দিন সাক্ষ্যে জানিয়েছেন।
দীর্ঘ জেরার একটি পর্বে উঠে আসে কালিদাস মণ্ডল এবং কার্তিক মণ্ডল ওরফে মিঠুন প্রসঙ্গ। আইনজীবী সুবীর দেবনাথ জানতে চান, কালিদাস আর কার্তিক খুড়তুতো ভাই কিনা। সুমিত বলেন, তা-ই। দু’জনেরই বাড়ি বকুলতলা মোড়ের কাছে বলেও তিনি জানান। মজিদপুর-দক্ষিণপাড়া ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের লিপিকা বিশ্বাসের বাড়িও ওই একই জায়গায় কি? সাক্ষী বলেন, “হ্যাঁ”। আইনজীবী প্রশ্ন করেন, “কালিদাস এবং কার্তিক কি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল?” সুমিত সম্মতি জানান। পরের প্রশ্ন: “তারা কি ওই দলের হয়ে প্রচার করত?” সাক্ষী বলেন, “হ্যাঁ।”
অভিযুক্তের আইনজীবী দাবি করেন, বিরোধী রাজনীতি না করার জন্য সত্যজিতের দলবল এদের নিষেধ করেছিল। কিন্তু তা না শোনায় দু’পক্ষে গন্ডগোল হয়। পুলিশ আসে। তখন পুলিশের সামনে সত্যজিৎ বিরোধীদের মারধর করেছিলেন কি না তা জানতে চান আইনজীবী। সুমিত বলেন, “আমি জানি না।” আইনজীবী দাবি করেন, “ওই মারধরের পর কার্তিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এখনও তিনি কিছুটা অসুস্থ। এর পর এলাকায় সত্যজিতের অনেক শত্রু তৈরি হয়।” সাক্ষী বলেন, তিনি জানেন না। সাক্ষ্য গ্রহণের শেষ পর্বে সুমিতকে আইনজীবী বলেন, “আপনি তো চান, আপনার দাদার খুনের সঙ্গে যারা যুক্ত তারা শাস্তি পাক?” সুমিত সম্মতি জানান। পরের প্রশ্ন: “আপনি জানেন সাজা পাওয়ানোর জন্য পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে হয়?” সুমিত বলেন, “হ্যাঁ।” প্রশ্ন: “কিন্তু আপনি নিজে পুলিশে অভিযোগ করেননি?” সাক্ষী উত্তর দেন, “না, করিনি।” আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর ফের সুমিত বিশ্বাসের সাক্ষ্যগ্রহণ হবে।