রানাঘাট থেকে দলীয় নেতৃত্বকে একাধিক বার্তা দিলেন অভিষেক। ফাইল চিত্র।
কোনও নেতার ‘তল্পিবাহক’কে নয়, এলাকার উন্নয়নের জন্য আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে সাধারণ মানুষই তৃণমূলের প্রার্থী বাছবেন বলে শনিবার রানাঘাটে নিদান দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিনের দলীয় সভায় উপস্থিত নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, “পঞ্চায়েতে কারা দাঁড়াবেন, মানুষের জন্য কাজ করবেন, সাধারণ মানুষই তা জানাবেন।’’
এর আগেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে স্বচ্ছ ভাবমুর্তির প্রার্থীর কথা দলের পরিকল্পনায় আছে বলে জানিয়েছিলেন অভিষেক। তাঁর এদিনের এই মন্তব্য সারা রাজ্যের তৃণমূলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে না শুধু নদিয়ার জন্যই তাঁর এই নির্দেশ তা অবশ্য পরিষ্কার নয়। তা সত্ত্বেও অভিষেকের নির্দেশকে বাহবা দিচ্ছেন মুর্শিদাবাদের তৃণমূল নেতারা।
ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর এদিন বলেন, “উনি দেখেছেন গ্রামের উন্নয়নের জন্য উপর থেকে প্রার্থী ঠিক করে দিলে গ্রামের মানুষের চাহিদা পূরণ হয় না। গ্রামের পছন্দের মানুষকে প্রার্থী না করলে তাঁদের ইচ্ছা ধাক্কা খায়, তার প্রভাব পরে নির্বাচনে। তাই দলের স্বার্থে আমার মনে হয় উনি সঠিক নির্দেশ দিয়েছেন।”
রানিনগরের বিধায়ক সৌমিক হোসেন বলেন, “উনি একদম সঠিক কথা বলেছেন। এর ফলে যোগ্য লোকেরা যোগ্য পদ পাবেন।” সৌমিক বলেন, “ ভাল ও স্বচ্ছ ব্যক্তির এই সুযোগ পাওয়া উচিত। তবে তাঁকে অভিষেক ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মেনে চলার পাশাপাশি দলের নীতি মেনে চলতে হবে।”
সেই প্রার্থীকে নিয়ে দলের স্থানীয় স্তরে কোনও সমস্যা হতে পারে কি? সৌমিক বলেন, “ভাল কাজ যে করে তাঁকে নিয়ে দলের কোথাও কোনও সমস্যা হবে না।” সুতির বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস বলেন, “এটা কোনও নতুন কথা নয়। যতদিন রাজনীতিতে যুক্ত আছি ততদিন আমার এলাকায় গ্রাম সভাপতি, বুথ কমিটি, বুথের নেতৃত্ব এবং ওই এলাকার সজ্জন ব্যক্তিদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে প্রার্থী বাছাই করা হয়। একাধিক নাম উঠে এলে গ্রামের মানুষ তখন যাঁকে বেছে দেন তাঁকেই আমরা প্রার্থী করি।” নবগ্রামের বিধায়ক কানাই মণ্ডল বলেন, “এই পদ্ধতিতে প্রার্থী নির্বাচন করলে কোথাও কোনও সমস্যা হবে না।” তবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কমবে কি না তা হলফ করে অবশ্য বলতে পারেননি তিনি। তিনি বলেন, “দলে মতানৈক্য থাকতে পারে কিন্তু সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে সবাইকে। তাতে নির্বাচনে প্রভাব পড়বে না।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা খোঁচা দিয়ে বলেন, “উনি আগে গ্রামের মানুষকে ভোট দেওয়ার অধিকার ফিরিয়ে দিন, গ্রাম সংসদের সভা করার ব্যবস্থা করুন তারপর এই ধরনের কথা বলবেন। পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে তাই ফের মানুষকে টোপ দিয়ে বাজার গরম করা কথা বলছেন।” মুর্শিদাবাদ-বহরমপুরের তৃণমূল সভাপতি শাওনি সিংহরায় বলেন, “সিপিএমের জমানায় সিপিএম গণতন্ত্র হত্যা করে মানুষকে ভোট করতে দেয়নি। সেই ধারণাটা ওদের এখনও রয়ে গিয়েছে। আমরা কিছুদিন আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পুরসভা নির্বাচন করেছি। সেই ভাবেই পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে।”