তৃণমূলের সঙ্কটের সময় নদিয়ায় সবচেয়ে কঠিন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শঙ্কর সিংহকে, এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ শাসক দলের নেতাদের মতবিরোধ গত শনিবার মন্ত্রী তথা নবনিযুক্ত জেলা পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকেই প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানেই একাধিক স্থানীয় নেতা জেলায় খারাপ ফলের জন্য সরাসরি শঙ্করকে দায়ী করেছেন বা তাঁর ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। অথচ লোকসভা ভোটের খারাপ ফলের পর এই শঙ্কর সিংহকেই দলকে টেনে তোলার ভার দিয়ে রানাঘাটের দায়িত্বে নিয়ে আসা হয়েছে। স্বভাবত প্রশ্ন উঠছে, যাঁর বিরুদ্ধে দলের অন্দরেই এত ক্ষোভ, অনাস্থা তিনি কী করে দলকে সংগঠিত ও শক্তিশালী করে তোলার কাজ করবেন? তাঁর নেতৃত্বে রানাঘাট তথা গোটা নদিয়ায় তৃণমূল তার ফাটল আটকে কী করে বিজেপির মোকাবিলা করবে?
রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশের মতে অবশ্য, শঙ্কর সিংহ দলের মধ্যে এমন বিরোধিতার সামনে পড়বেন এটাই প্রত্যাশিত ছিল। কারণ, প্রথমত: নির্বাচনে ভরাডুবি দলের সাংগঠনিক দুর্বলতাকে বে-আব্রু করে দিয়েছে। ফলে নিরাপত্তাহীনতা, ভয়, অবসাদ প্রভৃতি থেকে নেতারা পরস্পরকে দোষারোপ করবেন এটাই স্বাভাবিক।
দ্বিতীয়ত: শঙ্কর সিংহ বছর দু’য়েক আগে তৃণমূলে এসেছেন। ফলে এরই মধ্যে তাঁর সভাপতি হওয়াটা অনেকেই মন থেকে মানতে পারছেন না। ক্ষমতার ভরকেন্দ্র পরিবর্তিত হওয়ায় অনেকেই স্বার্থে ঘা লাগার ভয়ে শঙ্কিত। তাঁদের অনেকেই বিরোধিতার চেষ্টা করছেন। তাঁকে ‘কংগ্রেসের লোক’ বলে দেগে দিতে চাইছেন।এটা বুঝেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার শঙ্কর সিংহকে বলেন, তাঁর যেন নিজের লোক, কাছের লোক বলে কেউ না থাকে। যোগ্য লোককেই যেন যোগ্য জায়গা দেওয়া হয়। দলের মধ্যে কোনও ‘লবিবাজি’ বরদাস্ত করা হবে না বলেও এ দিন নেতা-কর্মীদের বার্তা দিয়েছিলেন রাজীব। এবং নিজের কথায় স্পষ্ট করে দিয়েছেন, শঙ্করকে মেনেই চলতে হবে সকলকে। যা কিছু সমস্যা তার সমাধানসূত্র শঙ্কর সিংহের সঙ্গে আলোচনা করেই খুঁজতে হবে। হয়তো সেই কারণেই শনিবারের বৈঠকে শঙ্করের বিরুদ্ধে অনেকে মুখ খুললেও রবিবার এ নিয়ে একটাও কথা বলতে চাননি কোনও নেতাই। বিধায়ক রত্না ঘোষকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলছেন, “অত্যন্ত গঠনমূলক পরিবেশে বৈঠক হয়েছে। বাকিটা যা বলার আমাদের নেতা শঙ্কর সিংহ বলবেন।” আবার চাকদহের ব্লক সভাপতি দিলীপ সরকার বলছেন, “দলীয় কোনও বিষয় নিয়ে কোনও কথা বলব না।” আর বারবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি গয়েশপুর শহর সভাপতি সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়কে। শনিবারের সভার পরে সকলেই বাইরে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, বিবাদ ভুলে তাঁরা এক ছাতার তলায় চলে এসেছেন। কিন্তু সত্যিই অন্তর থেকে তা মানতে না পারলে আদৌ কি দলকে লড়াইয়ে ফেরাতে পারবেন শঙ্কর? নাকি বিধানসভা ভোটে সমস্যা আরও মারাত্মক আকার নেবে? রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শঙ্কর সিংহের উত্তর, “চার ঘন্টা ধরে সভা হয়েছে। মুক্তমনে সকলেই তাঁদের এলাকার সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। রাজীববাবু প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অত্যন্ত মনযোগ দিয়ে সকলের কথা শুনেছেন। সেখানে কোনও অভিযোগ বা পাল্টা অভিযোগের মতো ঘটনা ঘটেনি। সকলকেই এক ছাতার তলায় আসতে হবে।” আর রাজীববাবু বলছেন, “কোথাও-কোথাও নেতৃত্বের মধ্যে কিছুটা সমস্যা থাকলেও কর্মীরা চাঙ্গা আছেন। দল আবার সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে।”