প্রশ্নের মুখে শহরের নিরাপত্তা

বহরমপুরে গুলিবিদ্ধ তৃণমূল নেতা

বহরমপুর আছে বহরমপুরেই! গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে খুন হন তৃণমূলের বহরমপুর পূর্ব-ব্লকের নির্বাহী সভাপতি মাসুদ রানা। ২৯ এপ্রিল রাতে খুন হন তৃণমূলের জেলা সম্পাদক জালাল শেখের আত্মীয় মাসারুল হোসেন সুমন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ০১:৪০
Share:

ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন সুবীরবাবুর মেয়ে। ইনসেটে, গুলিবিদ্ধ সুবীরবাবু।—নিজস্ব চিত্র

বহরমপুর আছে বহরমপুরেই!

Advertisement

গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে খুন হন তৃণমূলের বহরমপুর পূর্ব-ব্লকের নির্বাহী সভাপতি মাসুদ রানা। ২৯ এপ্রিল রাতে খুন হন তৃণমূলের জেলা সম্পাদক জালাল শেখের আত্মীয় মাসারুল হোসেন সুমন। সেই ঘটনার রেশ মিটতে না মিটতেই বৃহস্পতিবার ফের রক্তাক্ত হল বহরমপুর। এ দিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাঙালপাড়ায় গুলিবিদ্ধ হলেন তৃণমূলের জেলা সম্পাদক সুবীর সরকার ওরফে বাপি। প্রথমে তাঁকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও পরে এনআরএসে ভর্তি করানো হয়।

জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, ‘‘খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করা হয়েছে। কারণ এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ তবে একের পর এক এমন ঘটনায় শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বাঙালপাড়ার এক বাসিন্দা এ দিন বলেন, ‘‘প্রকাশ্যে দুষ্কৃতীরা যে ভাবে তাণ্ডব চালাল তাতে শহরে আদৌ আইন-শৃঙ্খলা বলে কিছু আছে কি না সেটাই তো বোঝা যাচ্ছে না।’’

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে বাড়িতেই ছিলেন সুবীরবাবু। সেই সময় বাইরে এমন সময় বাড়ির বাইরে হট্টগোল শুনে তিনি দরজা খুলে দেখতে যান। তখনই দুষ্কৃতীরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। সুবীরবাবুর বড় মেয়ে রিয়া সরকার বলেন, ‘‘সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ রুটি তরকারি খেয়ে সবে বাবা উঠে দাঁড়িয়েছেন। তখনই বাইরে একটা হইচই শুনে বাইরে গিয়েছিল। তারপরেই গুলির আওয়াজ।’’

গুলির আওয়াজ পেয়ে বাইরে ছুটে এসেছিলেন প্রতিবেশী সোনা ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, ‘‘১০ হাত দূরে গলির ভিতর দুষ্কৃতীরা আমাকে দেখেই পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি দেয়। আমি প্রাণ ভয়ে পালাই। তখনও বাপিদা ড্রেনে মুখ থুবড়ে পড়ে ছিল।’’ সেই সময় বাইরে বেরিয়ে আসেন সুবীরবাবুর ৮১ বছরের বৃদ্ধা মা রেবাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেকে গিয়ে কোনও রকমে জড়িয়ে ধরি। তখনও পিস্তল তাক করে গুলি করতে যাচ্ছিল ওরা। হাতের কাছে পড়ে থাকা আধলা ইট তুলে ওদের দিকে ছুড়তেই তিন জনে মোটরবাইকে চম্পট দেয়।’’

হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুষ্কৃতীরা সুবীরবাবুকে লক্ষ্য করে মোট ৫ রাউন্ড গুলি চালিয়েছে। তার মধ্যে ২টি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। একটি গুলি নাক ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। আর একটি গুলি ডান হাঁটুতে লেগে বেরিয়ে গিয়েছে। তৃতীয় গুলিটি বুক ও পেটের মাঝে ঢুকে রয়েছে। গুলির আঘাতে ড্রেনে মুখ থুবড়ে পড়ে তাঁর একটি দাঁত ভেঙে গিয়েছে। বুক ও পেটের মাঝে ঢুকে থাকা গুলি বের করতে না পারায় মুর্শিদাবাদ কলেজ হাসপাতাল থেকে তাঁকে এনআরএসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৩ রাউন্ড গুলি ও ব্যবহৃত গুলির ৩টি খোল উদ্ধার করেছে।

২০০৪ সাল নাগাদ বহরমপুরের বিক্ষুব্ধ কংগ্রেস কর্মীদের নিয়ে গড়া ‘ইন্দিরা-রাজীব মঞ্চ’-এর অন্যতম কর্তা সুবীর সরকার পরে তৃণমূলে যোগ দেন। ঘটনার পরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। ঘটনার পরে সুবীরবাবুর স্ত্রী চন্দনাদেবী স্থানীয় প্রাক্তন কাউন্সিলর হীরু হালদার, রতন হাজরা ও আল্লারাখা- সহ কংগ্রেসের মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। জেলা তৃণমূলের সভাপতি মান্নান হোসেনের অভিযোগ, ‘‘হীরু হালদার-বাবর আলির নেতৃত্বে কংগ্রেসের গুণ্ডা বাহিনী শহর জুড়ে খুন ও সন্ত্রাস চালাচ্ছে। তারাই এ দিন তৃণমূলের জেলা নেতা বাপিকে খুন করার উদ্দেশে গুলি করে।’’

অভিযোগ অস্বীকার করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘কোনও কিছু ঘটলেই কংগ্রেসকে অভিযুক্ত করা মান্নান হোসেনের অভ্যাস। সেই অভ্যাস থেকেই তিনি এই ভিত্তিহীন কথা বলেছেন। ঘটনার পরেই পুলিশকে বলেছি, প্রকৃত তদন্ত করে আসল দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।’’ পুলিশের একটি সূত্রের খবর, কাঠের আসবাবের ব্যবসায়ী সুবীরবাবু পুরনো বাড়ি ও জমি কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত। গত বুধবার সন্ধ্যায় বাঙালপাড়ার একটি জমি নিয়ে সুবীরবাবুর সঙ্গে কয়েকজনের বচসা হয়। ওই বচসার সঙ্গে এই ঘটনার যোগ রয়েছে কি না পুলিশ খতিয়ে দেখছে।

এ দিনের ওই ঘটনার প্রতিবাদে তৃণমূল বহরমপুর গির্জার মোড়ে প্রায় আধ ঘণ্টা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। রোদে-গরমে অবরুদ্ধ হয়ে নাকাল হন বহু মানুষ। ব্যাপক যানজটও তৈরি হয়। পরে অবশ্য পুলিশ অবরোধ তুলে দেয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement