TMC

ক্লাবই নেই, টাকা আসে বছর-বছর

ওই দুই ক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদক হিসেবে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরা তৃণমূলের নেতা হিসেবেই এলাকায় পরিচিত।

Advertisement

সন্দীপ পাল

কালীগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২০ ০৮:১১
Share:

প্রতীকী ছবি।

খাতায় কলমে ক্লাবের নাম আছে, বছরে বছরে সরকারি খয়রাতির টাকাও আসে। অথচ কালীগঞ্জের রাধাকান্তপুর গ্রামে এমন দু’টি ক্লাবের কোনও অস্তিত্বই নেই বলে অভিযোগ উঠল। কালীগঞ্জের বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগে ডিওয়াইএফ দাবি করেছে, রাজ্যের ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ দফতর থেকে দেওয়া অনুদান আত্মসাৎ করার জন্য প্রশাসনের কর্মীদের একাংশকে ব্যবহার করে ভুয়ো ক্লাবের নাম দেওয়া হয়েছে। শাসক দল তৃণমূলের নেতারা এই কাজে জড়িত।

Advertisement

২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল সরকার ক্লাবগুলির খেলার সরঞ্জাম কেনা ও অন্য নানা উন্নয়ন কল্পে অর্থ সাহায্য করার কথা ঘোষণা করেছিল। রাজ্য জুড়ে তালিকা তৈরি করে বহু ক্লাবকেই দু’লাখ টাকা করে দেওয়া হয়। পরেও বছর-বছর টাকা দেওয়া হয়েছে। তালিকায় নতুন নতুন ক্লাবের নামও ঢুকেছে।

ডিওয়াইএফ-এর তরফে মঙ্গলবার লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে যে, কালীগঞ্জের পানিঘাটা পঞ্চায়েতের রাধাকান্তপুর গ্রামে অগ্নিবীণা সঙ্ঘ ও রাধাকান্তপুর যুবক সঙ্ঘ নামে দু’টি ক্লাব ২০১৬ থেকে ’১৯ সাল পর্যন্ত আর্থিক সাহায্য পেয়েছে, কিন্তু আদতে তাদের কোনও অস্তিত্ব নেই। গ্রামের মানুষ ওই নামে কোনও ক্লাবের কথা কোনও দিন শোনেননি। অথচ দু’টি ক্লাবই ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে দু’লাখ টাকা করে এবং পরের দুই বছর এক লাখ টাকা করে পেয়ে এসেছে। অর্থাৎ তিন বছরে তাদের নামে মোট আট লক্ষ টাকা এসেছে। ওই দুই ক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদক হিসেবে যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরা তৃণমূলের নেতা হিসেবেই এলাকায় পরিচিত। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

Advertisement

পানিঘাটা পঞ্চায়েতের প্রধান তথা রাধাকান্তপুর গ্রামের বাসিন্দা আওসান মোল্লা বলেন, “ওই নামে কোনও ক্লাব আছে কি না আমার জানা নেই। গ্রামে পঞ্চায়েতের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তবেই বলতে পারব।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা গত বার ওই পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূল সভাপতি সাবেরুল শাহনাজ বলেন, “আগে ওই এলাকায় অন্য ক্লাব টাকা পেয়েছে। তবে ওই নামে কোনও ক্লাব নেই।’’ তাঁর দাবি, ‘‘দলে এই নিয়ে কথা হয়েছিল। আমি বাধা দেওয়ায় আমায় দলের অঞ্চল সভাপতির পদ হারাতে হয়েছে।”

যে ক্লাবের অস্তিত্ব নেই, তারা টাকা পেল কী করে? কেননা সরকারি অনুদানের জন্য আবেদন করতে গেলে ক্লাবের সরকারি রেজিস্ট্রেশন নম্বর থাকা প্রয়োজন। তার জন্য ক্লাবের নিজস্ব জমি থাকতে হবে এবং আর্থিক লেনদেনের হিসেব রাখতে হবে। এই সব অনুদানের জন্য আর্জি সচরাচর স্থানীয় বিধায়ক মারফত প্রশাসনের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরে যায়। সে ক্ষেত্রে তিনি ছাড়পত্র না দিলে ক্লাবের আবেদন নথিভুক্ত হওয়াই সম্ভব নয়।

তবে কালীগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক হাসানুজ্জামান শেখের দাবি, “এই সব ক্লাবের তালিকা দলের নিচু স্তর থেকে আমাদের কাছে আসে। আমরা জেলায় পাঠিয়ে দিই। সব তদন্ত করা সম্ভব হয় না। আবার অনেক সময়ে ফর্ম নিয়ে ক্লাবের তরফে কেউ আসেন। সেটাও পাঠিয়ে দিই। তবে ভুয়ো ক্লাবের অভিযোগ হলে বিষয়টি অবশ্যই দেখব।" জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, "বিষয়টি আমার জানা নেই। দলীয় ভাবে যদি আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করে, খতিয়ে দেখবো।"

ডিওয়াইএফ-এর ব্লক সম্পাদক জহিরউদ্দিন আহমেদের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের কিছু নেতা ভুয়ো ক্লাবের নামে টাকা তুলে ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। রাধাকান্তপুরে তারই নিদর্শন মিলেছে। প্রশাসন তদন্ত করুক।’’

বিডিও নাজির হোসেন বলেন, "অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।"

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement