TMC

WB Municipal Election 2022: গোঁজের কাঁটা বেশি বিঁধছে তৃণমূলকেই

লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে বড় মার্জিনে বিজেপির থেকে পিছিয়ে থাকলেও গত উপনির্বাচনে ১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ছ’শো ভোটে লিড পায় তৃণমূল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:১১
Share:

প্রতীকী ছবি।

পুরভোটের মনোনয়ন জমা দেওয়ার কাজ শেষ। আজ, শনিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। কিন্তু শুক্রবার পর্যন্তও জেলার বেশ কয়েক জায়গায় শাসক দলের বিক্ষুব্ধ প্রার্থী রয়ে গিয়েছেন।

Advertisement

রানাঘাট পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর শঙ্কর অধিকারীর স্ত্রী দীপ্তি অধিকারী এ বার নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। শঙ্কর গত নির্বাচনে এই ওয়ার্ড থেকে কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে তৃণমূলে যোগ দেন। এ বার ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। শঙ্করকে যেমন অন্য ওয়ার্ডে পুনর্বাসন দেয়নি দল, তাঁর স্ত্রীকেও ওই আসনে টিকিট দেয়নি তৃণমূল।

শঙ্করের দাবি, “এ বার দল আমার স্ত্রীকে প্রার্থী করবে বলেছিল। করেনি। এলাকার মানুষের দাবি মতো আমার স্ত্রী নির্দল প্রার্থী হয়েছেন।” তাঁর অভিযোগ, “রানাঘাট শহর তৃণমূলের সহ-সভাপতি পিন্টু সরকার ষড়যন্ত্র করে আমার স্ত্রীর নামটা বাদ দিয়েছেন।” যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করে পিন্টু বলেন, “এটা পুরোপুরি দলের বিষয়, আমার নয়।”

Advertisement

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, অন্য অনেক ওয়ার্ডের মতো এই আসনে প্রার্থী দেয়নি কংগ্রেস। রানাঘাট শহর কংগ্রেসের সভাপতি সমীরকুমার বসু বলেন, “আমরা ওই ওয়ার্ডে ভাল প্রার্থী পাইনি। সেই কারণে কাউকে দাঁড় করানো হয়নি।”

তাহেরপুরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে আবার নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তৃণমূলের ওয়ার্ড সভাপতি পরিতোষ মজুমদার। তাঁর পাশে দাড়িয়েছেন তৃণমূলের প্রাক্তন শহর সভাপতি সাধন সরকার। তাঁর প্রার্থিপদের প্রস্তাবকও সাধন। তাহেরপুরে দলের বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরোধী শিবিরের লোক বলেই পরিচিত সাধন। তাঁকে সরিয়ে এর আগেই শহর সভাপতি পদে সত্যেন্দ্রনারায়ণ ঘোষকে এনেছে দল। সাধন পরে দলের জেলা সম্পাদক পদ থেকেও ইস্তফা দেন।

পরিতোষের দাবি, “এখানে আমরা সাধনবাবুকেই প্রার্থী করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দলের তরফে কেউ আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই প্রার্থী দিয়েছে। যারা কিছু দিন আগেও বিজেপি করেছে তাদের প্রার্থী করা হচ্ছে। আর এত দিন দল করার পরেও আমরা সম্মান পেলামনা। তাই নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়াতে হল।” সত্যেন্দ্রনারায়ণ পাল্টা বলেন, “দলের নির্দেশ সকলকেই মানতে হবে। মানুষ দেখছে, কারা দলে থেকেও দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নামছে। এদের ভরসা করবে কী ভাবে? কোনও লাভ হবে না, তৃণমূলই জিতবে।”

শান্তিপুরের ১ নম্বর ওয়ার্ডে এ বার প্রার্থী বদল করেছে তৃণমূল। দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর এবং বিদায়ী বোর্ডের চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল তথা পুর প্রশাসক পর্ষদের সদস্য যতন সরকারকে ৪ নম্বরের বদলে ১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী করা হয়েছে। বাদ পড়েছেন ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর বিশ্বব্রত ঘোষ। প্রাথমিক মান অভিমানের পালা মিটিয়ে বিশ্বব্রত প্রচার করছেন যতনের সঙ্গেই। তবে এক সময়ে এখানে দলের ওয়ার্ড সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসা অমল মণ্ডল দাঁড়িয়ে পড়েছেন নির্দল প্রার্থী হিসাবে। অমলের দাবি, “মানুষের চাহিদা অনুযায়ী প্রার্থী করেনি দল। প্রার্থী হয়েছেন অন্য ওয়ার্ডের বাসিন্দা। কাজেই মানুষের ইচ্ছায় আমাকে প্রার্থী হতে হল।” আবার শান্তিপুর শহরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল কর্মী শ্যামল মাহাতোও নির্দল হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এই নির্দলদের সমর্থনের কথা জানিয়েছে কংগ্রেস।

লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে বড় মার্জিনে বিজেপির থেকে পিছিয়ে থাকলেও গত উপনির্বাচনে ১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ছ’শো ভোটে লিড পায় তৃণমূল। আর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিধানসভা ভোটে প্রায় বারোশো ভোটে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। উপনির্বাচনে প্রায় একই লিড ধরে রেখে সামান্য বেড়েছে শাসক দল। কিন্তু দুই আসনেই দলের প্রাক্তন কর্মীদের ভোটে দাঁড়িয়ে পড়ায় কি বিড়ম্বনা বাড়বে না? শান্তিপুর শহর তৃণমূলের সভাপতি বৃন্দাবন প্রামাণিক দাবি করছেন, “কোনও প্রভাব পড়বে না। মানুষ তৃণমূলের প্রতীক আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে ভোট দেবেন। আমরাই জিতব।”

রাজ্যের শাসক দলের পায়ে গোঁজের কাঁটা বিধেছে কল্যাণীতেও। ২০০০ সালে তৃণমূলের কাউন্সিলর হওয়া সোনামনি হাঁসদা এ বার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। আবার কল্যানী শহর তৃণমূলের সম্পাদক চন্দ্রা মণ্ডলও নির্দল প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ২০ নম্বর ওয়ার্ডে।গোঁজের কাটা তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কে থাবা বসিয়ে বিরোধীদের সুবিধা করে দিতে পারে যেমন, তেমন আবার দলের বিক্ষুব্ধদের ভোট বিরোধীদের দিকে না গিয়ে গোঁজ প্রার্থীর ঘরে চলে গেলে কাটাকাটির অঙ্কে তৃণমূলেরও সুবিধা করে দিতে পারে। তবে গোঁজ কতটা বিঁধে থাকে, তা স্পষ্ট হবে আজ, শনিবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় পেরিয়ে গেলে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement