—প্রতীকী চিত্র।
রানাঘাটের বিজেপি সাংসদের কটাক্ষ বিফলে গেল। ‘আম’ (সাংসদ পদ) পেলেন না বটে, তবে ‘ছালা’ (বিধায়ক পদ) ঠিকই বাঁচিয়ে নিলেন মুকুটমণি অধিকারী।
প্রায় ১৩ বছর পর রানাঘাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে ফের জয়ী হল তৃণমূল। সদ্য হয়ে যাওয়া লোকসভা নির্বাচনে যেখানে প্রায় ৩৭ হাজার ভোটে পিছিয়ে ছিলেন মুকুটমণি অধিকারী, তিনিই জিতলেন ৩৯ হাজারেরও বেশি ভোটে। শান্তিপুরের পরে ফলে দক্ষিণ নদিয়ায় আরও একটি আসন তৃণমূলের হাতে এল। যদিও মতুয়া গড়ে এই হারের জন্য তৃণমূলের সন্ত্রাসকেই দায়ী করছে বিজেপি।
গত বিধানসভা নির্বাচনে এই আসনে বিজেপির টিকিটে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার ভোটে জিতেছিলেন মুকুট। তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়ে তিনি রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হওয়াতেই এই উপনির্বাচন। বিজেপির জগন্নাথ সরকারের কাছে হারার পর এই ভোটে তাঁকেই ফের প্রার্থী করে তৃণমূল। বিজেপি প্রার্থীমনোজকুমার বিশ্বাস দাবি করেছিলেন, এখানে তাঁদের জমি তৈরিই আছে, শুধু ফসল তোলার অপেক্ষা। কিন্তু শেষমেশ ফসল উঠল গিয়ে তৃণমূলের গোলায়।
এক সময়ে মুকুটমণি সম্পর্কে জগন্নাথ কটাক্ষ করেছিলেন, "ওঁর আমও যাবে, ছালাও যাবে।" শনিবার ফল ঘোষণার পরে তিনি বলেন, "মারধর করে ভোট লুট করা ছাড়া এই 'ভানুমতির খেল' সম্ভব নয়।" যদিও প্রার্থীর সঙ্গে তাঁর ‘দূরত্ব’ সর্বজনবিদিত। ভোটের প্রচারে সাংসদ বা তাঁর অনুগামীদের তেমন সক্রিয় হতে দেখাও যায়নি। তবে জগন্নাথের দাবি, "আমি দিল্লিতে ছিলাম। তার মধ্যে যতটা সময় পেয়েছি, প্রচারে যোগ দিয়েছি।"
তৃণমূল শিবিরের ব্যাখ্যা, আসল ‘খেল’ দেখিয়েছেন দু’জন। এক, উপনির্বাচনের ঠিক আগে দলের সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান করে রাজনৈতিক সন্ন্যাস থেকে ফিরিয়ে আনা বর্ষীয়ান নেতা শংকর সিংহ। সঙ্গে ছিলেন দ্বিতীয় বার কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা মহুয়া মৈত্রও। গোষ্ঠী বিভাজন সরিয়ে রেখে একযোগে ঝাঁপানোর নির্দেশ ছিল সরাসরি তৃণমূল ভবন থেকে। তা ছাড়া, বিজেপির ‘বহিরাগত’ প্রার্থীর তুলনায় এই মতুয়া-গড়ে প্রাক্তন বিধায়ক তথা মতুয়া নেতা মুকুটমণি অনেক বেশি পরিচিত মুখ। তার উপর লক্ষ্মীর ভান্ডারের কল্যাণে মহিলা ভোটের একটা অংশও তৃণমূলের দিকে ঝুঁকেছে। সব মিলিয়েই এই ফল।
তবে যা-ই বলা হোক না কেন, সন্ত্রাসের অভিযোগ তৃণমূলের পক্ষে এড়ানো শক্ত। ভোটের আগের রাত থেকেই বিজেপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা, ভোটের দিনভর বাইক-বাহিনীর দাপাদাপির বহু অভিযোগ উঠেছে। বহু বুথে বিরোধী এজেন্টদের দেখা মেলেনি। তবে দলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবাশীষ গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, "হিংসা অশান্তির সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। ঐক্যের জয় হয়েছে।"