প্রতীকী ছবি
শাসক ও বিরোধীদের সংঘাতে উত্তপ্ত হল দোলের নবদ্বীপ।
রবি এবং সোমবার পরপর দু’দিন এবিভিপি ও বিজেপি-সমর্থকদের সঙ্গে তৃণমূল সমর্থকদের গোলমালেউভয় পক্ষের একাধিক সমর্থক আহত হয়ে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি। প্রথমে ছিলেন ১০ জন। পরে পাঁচ জনকে ছুটি দেওয়া হয়। দু’জন নিজেই ছুটি নিয়ে চলে গিয়েছেন। দু’পক্ষই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
রবিবার সন্ধ্যায় দোলের শুভেচ্ছা জানাতে ফ্লেক্স টাঙাতে গিয়ে তৃণমূলের হাতে মার খাওয়ার অভিযোগ তোলেন এবিভিপি সদস্যেরা। তাঁদের অভিযোগ, সংগঠনের নবদ্বীপের সভাপতি শুভঙ্কর হালদারকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও তৃণমূল তা অস্বীকার করে এবিভিপি-র বিরুদ্ধেই অশান্তি পাকানোর পাল্টা অভিযোগ জানিয়েছে।
রবিবার অর্থাৎ দোলের আগের সন্ধ্যায় গৌরাঙ্গ সেতু-সংলগ্ন এলাকায় নবদ্বীপের বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহার আয়োজনে প্রতি বছরের মতো দোল উদ্যাপনের জন্য মহাপ্রভুর মূর্তি স্থাপন করে উৎসবের আয়োজন চলছিল। গৌরাঙ্গ সেতুর বিভিন্ন জায়গায় একাধিক মঞ্চ তৈরি করেছিল তৃণমূল। ওই সময়ে একই অঞ্চলে দোলের শুভেচ্ছা জানিয়ে ফ্লেক্স টাঙাচ্ছিল এবিভিপি। তাতেই সমস্যা তৈরি হয়।
তৃণমূলের অভিযোগ, সেতুর পূর্ব দিকে তাঁদের গড়া এক অনুষ্ঠান মঞ্চের সামনে ফ্লেক্স টাঙাতে গেলে বচসা বাধে উভয় পক্ষের। মারামারি শুরু হয়। মাথা ফাটে এবিভিপি নবদ্বীপের সভাপতি শুভঙ্কর হালদারের। এই ঘটনায় জড়িত তৃণমূল সমর্থকদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে রাতে পোড়ামাতলার মোড় ঘণ্টাখানেক অবরোধ করা হয়।
তবে নবদ্বীপ যুব তৃণমূলের সভাপতি সুজিত সাহা পাল্টা বলেন, “আমাদের মারামারি করার দরকার হয় না। আসলে সে দিন দোলের অনুষ্ঠান চলাকালীন আচমকাই কয়েক জন গৌরাঙ্গ সেতুতে অশান্তি পাকানোর উদ্দেশ্যে হাজির হয়েছিলেন। দলীয় পতাকা টাঙানোর নাম করে তাঁরা অনুষ্ঠান পণ্ড করার চেষ্টা করলে স্থানীয় মানুষের তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে আহত হয়েছেন।”
সোমবার, দোলের দিন বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ প্রতাপনগরে ফের ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন বিজেপি ও তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। বিজেপির অভিযোগ, তাঁদের আইটি সেলের নবদ্বীপ বিধানসভা কেন্দ্রের আহ্বায়ক সুরজিৎ বিশ্বাসকে নিয়ে তাঁদের আর এক সক্রিয় সমর্থক অরুণরাজ সাহা মোটরবাইকে যাচ্ছিলেন। ওই এলাকার তৃণমূল সমর্থকেরা মণিমেলার মাঠের কাছে তাঁদের জোর করে বাইক থেকে নামিয়ে মারধর করেন। দু’জনকেই নবদ্বীপ হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। বিজেপির নবদ্বীপ শহর উত্তর যুব মোর্চার সভাপতি তন্ময় কুণ্ডুর দাবি, “সুরজিতদের মার খাওয়ার খবর পেয়ে গিয়ে শুনি, এলাকার মানুষের প্রতিরোধের মুখে পড়ে তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা পালিয়ে গিয়েছে। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে কারা কারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তা বিস্তারিত জানিয়েছি।”
তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, বিজেপির বাইকবাহিনী এলাকায় দাপিয়েছে। তারা প্রতাপনগরে তৃণমূল কার্যালয়ের সামনে গিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করলে গোলমাল বাধে। নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ঘটনাটি ঘটে। পুরপ্রধানের দাবি, “বিজেপির তরফে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তৃণমূল পার্টি অফিসের সামনে ঝামেলা পাকানোর চেষ্টা হয়েছিল। আমি জানতে পেরে সঙ্গে-সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাই। ছেলেদের বুঝিয়ে শান্ত করি। এ বার আইন তাঁর নিজের পথে চলবে।” আবার নবদ্বীপে বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা জীবন সেন বলেন, “আসলে তৃণমূল ভয় পাচ্ছে আমাদের। তাই মারতে শুরু করেছে। পুরভোটে এর জবাব পাবে।”