জমি দখল করে ক্লাবঘর। টাঙানো তৃণমূলের পতাকাও।—নিজস্ব চিত্র।
মৃত নিঃসন্তান এক মহিলার সম্পত্তি দখল নিতে বাড়িতে বসবাসকারী তাঁর দেওরের ছেলেকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের প্রধান ও দলবলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ গোপাল বিশ্বাস নামে ওই যুবকেকে বাঁচাতে গেলে তাঁর স্ত্রী ও দুই বোন তাঁদের হাতে হেনস্তাও হন। ঘটনার পরে হাঁসখালি থানার মিলননগরের বাসিন্দা গোপালবাবু পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। শুধু তাই নয় মহিলার মৃত্যুর পরে গ্রামেরই বেশ কিছু তৃণমূূলের নেতা-কর্মী মিলে ওই মহিলার প্রায় আড়াই কাঠা জমি দখল করে ক্লাব ঘর তৈরি করেছেন। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই মহিলা মারা যাওয়ায় তার সমস্ত জমি দখল নেওয়ার চক্রান্তে মেতেছেন ওই তৃণমূল নেতারা। জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, “আমরা একটা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তও শুরু হয়েছে। তবে যদি কেউ ওই জমি জোর করে দখল করতে যায় তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি যেই হন না কেন।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিঃসন্তান কালীদাসীদেবী গোপালবাবুকে সন্তানস্নেহে মানুষ করেন। কিন্তু প্রায় মাস দশেক আগে তিনি মারা যান। অভিযোগ, তারপরই তাঁর সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার জন্য সক্রিয় হয়ে ওঠেন শাসক দলের স্থানীয় নেতারা। জমি দখল নিয়ে তাতে একটি ক্লাবঘরও তৈরি করা হয়েছে। একাধিক বার আলোচনায় বসে তাঁকে বাড়ি ফাঁকা করে দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি সে কথা না শোনায় ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা নাগাদ বগুলা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পীযুুষকান্তি কুণ্ডুু দলবল নিয়ে এসে বাড়িতে চড়াও হন বলে অভিযোগ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের দুই প্রাক্তন প্রধান পলাশ বিশ্বাস ও অরুণ বিশ্বাস। দু’জনই বর্তমানে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য। এছাড়াও স্থানীয় কয়েকজন তৃণমূল নেতাও উপস্থিত ছিলেন। গোপালবাবু সকলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করেছেন। গোপালবাবুর অভিযোগ, “ওরা এসে আমাকে বাড়ি খালি করে দিতে বলে। আমি তাতে রাজি না হওয়ায় ঘরের ঢুকে আমাদের সমস্ত জিনিসপত্র বাইরে উঠোনে টান মেরে ফেলে দিতে থাকে। আমার স্ত্রী ও দুই বোন আমাকে বাঁচাতে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয়।” তিনি জানান, এরপর ওই প্রধান নিজের হাতে ঘরে তালা দিয়ে দেয়। বাড়িতে ফিরে গেলে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। ঘটনার পর তিনি ও তাঁর স্ত্রী নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে বাধ্য হন। শুধু তাই নয় ১০ মাস হয়ে গেলেও গোপালবাবুকে তার জ্যাঠাইমার ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ দেয়নি প্রধান। নানা আছিলায় একাধিকবার ঘোরানোর পর ডেথ সার্টিফিকেট যে দেওয়া হবে না সেটাও স্পষ্ট করে গোপালবাবুকে জানিয়ে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য আমার কাছ থেকে দশ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়েছিল। সেই টাকাটা দিলে হয়তো জমি নিয়ে এত সমস্যা করত না।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, কালীদাসীদেবীর আইনত ওয়ারিশ গোপাল বিশ্বাস কিনা তা ঠিক করবে আদালত। সেটা ঠিক করে দেওয়ার অধিকার তো পঞায়েত প্রধানে কে দেওয়া হয়নি। তাহলে কোন অধিকারে প্রধান ও তাঁর দলবল এসে তাঁদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিলেন। পঞ্চায়েত প্রধান পীযুুষকান্তিবাবু অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমরা কাউকেই ওই বাড়ি থেকে বের করে দেইনি। মারধরও করিনি। সম্পূণর্র্ মিথ্যা অভিযোগ।” তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি প্রকৃত ওয়ারিশ কিনা তার কোনও প্রমান আমরা পাইনি। তাছাড়া আরও কয়েকজন এসে নিজেদের ওয়ারিশ বলে দাবি করছেন। এলাকায় যাতে এই নিয়ে কোনও অশান্তি না হয় তার জন্যই আমি ওদের সঙ্গে বসে অলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার চেষ্ঠা করেছি। বলেছি সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি ছেড়ে দিতে। তার পরই ওরা স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে।” কিন্তু এই ভাবে কী কাউকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলার আইনি কোনও অধিকার কী প্রধানের আছে। তাছাড়াও দশ মাসেও কেন গোপালবাবু তার জ্যাঠাইমার ডেথ সার্টিফিকেট পেলেন না। উত্তরে পীযুুষকান্তিবাবু বলেন, “আরও দু’এক জন এসে নিজেকে কালীদাসীদেবীর ওয়ারিশ বলে দাবি করছেন। কে প্রকৃত ওয়ারিশ সেটা আগে ঠিক হোক। তার পর তো তাঁকে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।” তবে পরিস্থিতি যে ক্রমশ জটিল হচ্ছে তা পরিষ্কার হয়ে যায় গোপালবাবুর স্ত্রী মিতাদেবীর কথাতেই। তিনি বলেন, “থানায় অভিযোগ করার পর থেকেই হুমকি দিয়ে ফোন আসছে। ভয়ে আমার স্বামী বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। কেবলই ভয় হচ্ছে এই বুঝি কোনও রকমের বড় ক্ষতি হয়ে যায়।”