অসহায়: ঘরে পড়েছে তালা। বারান্দায় পড়ে বৃদ্ধ দম্পতি। নবদ্বীপের চর স্বরূপগঞ্জে। নিজস্ব চিত্র
ছেলে-বউমাদের কথামতো তাঁদের নামে লিখে দেননি কম-বেশি চারকাঠা জমির উপর নির্মিত বসত-ভিটে। তাতেই বাবার উপর ক্ষুব্ধ তিন ছেলে। অশান্তি, মারধর, রক্তপাত থেকে তা শেষ পর্যন্ত থানা-পুলিশে গড়ায়। কিন্তু তবুও টলানো যায়নি বাবাকে। বৃদ্ধ ওই দম্পতিকে মারধরের অভিযোগে হাজতবাসও করেছে ছেলেরা। তার পরেই বাবা-মাকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে বাড়ির একাধিক ঘরে তালা লাগিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন তিন ছেলে। নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জ পঞ্চায়েতের চরস্বরূপগঞ্জের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধ বাবা-মায়ের আশ্রয় এখন বাড়ির বারান্দা।
অভিযোগ, গত প্রায় আট মাসেরও বেশি সময় ধরে এ ভাবেই নরেশচন্দ্র বিশ্বাস এবং তাঁর স্ত্রী কাজলি বিশ্বাস নিজের বাড়িতে পরবাসী জীবনযাপন করছেন। আপাতত, বাড়ির বারন্দায় এক ছেলের ভরসায় দিন কাটছে বৃদ্ধ দম্পতির। খাওয়া জুটছে মেজ ছেলের কাছ থেকেই। সম্প্রতি নিজের বাড়ির তালা খুলে দেওয়ার জন্য কৃষ্ণনগরে সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন কাজলি এবং তাঁর স্বামী।
বৃদ্ধ নরেশচন্দ্র বিশ্বাসের বয়স নব্বই ছুঁই-ছুঁই। তাঁর সত্তরোর্ধ্ব স্ত্রী কাজলিদেবীর অভিযোগ, ছেলে-বউমারা বাড়ি লিখে দেওয়ার জন্য দীর্ঘ দিন চাপ দিয়েছে। কিন্তু তাঁরা রাজি হননি বলে তাঁদের উপরে গত তিন বছর ধরে চলছে অকথ্য অত্যাচার। যার চূড়ান্ত পরিণতি বাবা-মাকে বাইরে বার করে ঘরে তালা দিয়ে বাড়ি ছেড়েছেন ছেলেরা। নরেশচন্দ্র বিশ্বাসের চার ছেলে। এক সময়ে নিজে হকারি করে সংসার চালাতেন। বয়সের সঙ্গে ক্রমশ ছেলেদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন নরেশবাবু এবং তাঁর স্ত্রী। কাজলির অভিযোগ, “আমার স্বামীর রোজগার বন্ধ হতেই ছেলেরা ক্রমাগত চাপ দিতে থাকে বাড়ি লিখে দেওয়ার জন্য। কিন্তু শেষ জীবনের সম্বল হাতছাড়া করতে চাইনি আমরা। সেই শুরু হয় অত্যাচার।”
ওই বৃদ্ধ দম্পতির আইনজীবী দেবাশিস চৌধুরী বলেন, “এর আগেও এক বার এসডিও কোর্টে বয়স্ক নাগরিক হিসাবে আবেদন করেছিলেন ওঁরা। আদালত মাসে দেড় হাজার টাকা করে খোরপোষ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। যদিও সেই নির্দেশ পালন করা হয়নি। বর্তমানে ওই বাড়ির ঘরগুলিতে তালা লাগানো রয়েছে। আদালতের কাছে আমরা এই মর্মে আবেদন জানাচ্ছি যাতে বৃদ্ধ দম্পতির উপরে আর কোনও অত্যাচার না হয়, ঘরগুলি খোলার ব্যবস্থা করে আদালত।”
কাজলির অভিযোগ, মেজ ছেলে ছাড়া বাকিরা তাঁদের দেখাশোনা করে না। মেজ ছেলের সামান্য আয়। তাই ওই দম্পতি ঠিক করেন, বসতবাড়ির কিছু অংশ বিক্রি করে খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু তাঁদের বড়, সেজ এবং ছোট ছেলে তা করতে বাধা দিচ্ছে। উল্টে সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় জুটছে মারধর, গালমন্দ। অন্য দিকে, বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বড় ছেলে শিবশঙ্কর বিশ্বাস। তিনি বলেন, “সব অভিযোগ মিথ্যা। ওঁরা চান সব সময়ে প্রচুর টাকা, ভাল খাওয়া-পরা। তা দিতে পারিনি বলে মিথ্যা অভিযোগে জেল খাটতে হয়েছে। ওঁরা মরলে আমরা অশৌচ পালনও করব না।”
যদিও বাড়িতে তালা দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে শিবশঙ্কর বলছেন, “আমরা তিন ভাই ওই বাড়ি তৈরি করেছি। তাই বাড়ি ছাড়ার আগে তালা দিয়েছি।”