সরকারি ভাবে দুলাল বিশ্বাস হত্যাকান্ডে এখনও হাতে নেয়নি সিআইডি।
তবে, তার আগেই ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও তিন জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতেরা সকলেই এলাকায় পরিচিত তৃণমূল কর্মী। ফলে দলের নেতারা যাই বলুন না কেন, বিরোধীদের গোষ্ঠী কোন্দলের দাবিই শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হল বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জেলা পুলিশের এক অংশের দাবি, তদন্ত যতই এগোবে, এই খুনের পিছনে দলের মেজ-সেজ নেতাদের জড়িয়ে পড়াও অসম্ভব নয়।
এ দিন, পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছে তাদের মধ্যেও রয়েছে, কৈখালির বাসিন্দা বেনালী হাইস্কুলের শিক্ষক তথা বগুলা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের চার বারের প্রধান বিমল বিশ্বাস, তার ভাই তপন বিশ্বাস ওরফে কুটু এবং দুলাল বিশ্বাসের গ্রাম, ভায়নার বাসিন্দা তাপস বিশ্বাস।
তিন জনকে এ দিন রানাঘাট আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাদের ছ’দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে পুলিশ বিমলবাবুর ভাইপো শঙ্কর বিশ্বাস ও তার ঘনিষ্ট কমল মজুমদারকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে পাঁচ জনের নামই এফআইআরে আছে। যদিও ধৃত বিমল বিশ্বাসের স্ত্রী, বগুলা-গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান চঞ্চলা বিশ্বাসের দাবি গ্রেফতার নয়, আত্মসমর্পণ করেছেন বিমলবাবুরা। তার দাবি, “প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতেই আমার স্বামী-সহ গোটা পরিবারকে কাঠগড়ায় তুলতে চাইছে পুলিশ।”
রবিবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ বগুলা শ্রীকৃষ্ণ কলেজের সামনে দলীয় কার্যালয়ের ভিতরেই দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হয়েছিলেন তৃণমূলের হাঁসখালি ব্লক সভাপতি তথা বগুলা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দুলাল বিশ্বাস। ঘটনার পর দিন বগুলায় এসেছিলেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ দুই নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। তাঁরা দুজনই বিজেপি-র দিকে আঙুল তুলেছিলেন। কিন্তু বিরোধীদের পাশাপাশি স্থানীয়দের দাবি ছিল গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই খুন হতে হল শাসক দলের দোর্দন্ড প্রতাপ এই নেতাকে।
পাঁচ জনের এই গ্রেফতার তা হলে বিরোধীদের কথাকেই প্রতিষ্ঠা দিল? আর তদন্তকারীদের সামনে উঠে আসছে সেই পুরনো বিবাদের গল্প। জেলার তদন্তকারীদের এক অংশের দাবি, শুধু এফআইআরে নাম থাকার জন্যই নয় তদন্তের নেমে পুলিশের সামনে বেশ কয়েকটি সম্ভাবনা উঠে আসে। তার মধ্যে অন্যতম প্রধান হল, দুলাল-বিমলের পুরনো বিবাদ। দুলাল বিশ্বাসের ভাইকে খুনের অন্যতম অভিযুক্ত এক কালে এলাকার তাবড় নেতা বিমল বিশ্বাস। সেই ঘটনায় তিনি একমাস জেলেও খাটেন। সেই সময় তিনি ছিলেন কংগ্রেস নেতা। আর অন্যতম অভিযুক্ত ভায়নারই বাসিন্দা কার্তিক বিশ্বাস। পরে সেই কার্তিক বিশ্বাসের দাদাকে খুনের অভিযোগ ওঠে দুলাল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। ফলে এই দু’জনের সঙ্গেই দুলালবাবু শত্রুতা রয়ে গিয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ।