জেলা প্রশাসনের দফতরে প্লাস্টিকে মোড়া খাবার। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র
একেই বোধহয় বলে, একেবারে ‘সরষের মধ্যে ভূত’!
দুপুর প্রায় ২টো।
ফলিত অর্থনীতি ও পরিসংখ্যান সংস্থার সহ-অধিকর্তার দফতরে বিজয়ার ভোজ সারছেন কয়েক জন কর্মী। টেবিলের উপরে রাখা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ থেকে খাবার বার করে অত্যন্ত মনযোগ দিয়ে খাচ্ছেন তাঁরা।
কিন্তু কৃষ্ণনগর শহরে যে এখন প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ?
প্রশ্ন করতেই ফোঁস করে উঠল দু’একটি গলা— “সব ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ নয়। আমরা যে ক্যারিব্যাগে খাবার নিয়েছি, সেটা নিষিদ্ধ নয়।” যদিও কৃষ্ণনগর পুরসভা শহরে সমস্ত ধরনের ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। প্রতিদিন শহর জুড়ে অভিযান চলছে। বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে প্রচুর ক্যারিব্যাগ।
এই পরিস্থিতিতে খোদ সরকারি দফতরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার অবাক করেছে নাগরিকদের। প্রশ্ন উঠছে, বাজারে-হাটে সাধারণ মানুষ, ক্রেতা ও বিক্রেতা, এত দিনের অভ্যাস ছেড়ে বেরিয়ে আসার জন্য যে কষ্ট সহ্য করছেন, তথাকথিত শিক্ষিত মুরুব্বিরা তার তোয়াক্কা করছেন না? তাঁরা কোন ‘ভিআইপি’?
এমন নয় যে তাঁরা পুরসভা এবং নাগরিকদের এই পরিবেশ রক্ষার অঙ্গীকারের কথা জানেন না। কিন্তু হাতে-নাতে ধরার পরও কেউ-কেউ জোর গলায় প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের পক্ষেই তর্ক জুড়েছেন। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কানে খবর যাওয়ার পরে অবশ্য ছবিটা পাল্টে যায়। জেলার এক কর্তার কথায়, “টানা প্রচারের পর প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধ করার জন্য কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে, তখন কিছু সরকারি কর্মচারীর এ হেন কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ দুঃখজনক।” দফতরের আধিকারিক সপ্তর্ষী বিশ্বাসও বলছেন, “অত্যন্ত অন্যায় কাজ হয়েছে। আমি জানতে পারলে কোনও ভাবেই এটা হতে দিতাম না। বিষয়টা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজন কড়া পদক্ষেপ করা হবে।”
জেলা প্রশাসনিক ভবনের পিছনে সংখ্যালঘু বিষয়ক জেলা আধিকারিক (ডিস্ট্রিক্ট অফিসার অব মাইনরিটি অ্যাফেয়ার্স বা ‘ডোমা’)-এর দফতরের ভিতরে দোতলায় ফলিত অর্থনীতি ও পরিসংখ্যান সংস্থার সহ-অধিকর্তার দফতর। সেই দফতর সূত্রে জানা যায়, আগামী দিন কী ভাবে কাজ করতে হবে তা নিয়ে পুজোর পরে দফতরের কর্মীদের একটা বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু সে দিন চাপ থাকায় খাওয়া-দাওয়া করার সময় পাওয়া যায়নি। তাই এ দিন কর্মীরা নিজেদের টাকায় বিজয়ার ভোজের আয়োজন করেছিলেন। সেই উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কর্মীরা এসেছিলেন।
খাবারের বরাত দেওয়া হয়েছিল জেলা পরিষদের ক্যান্টিনে। কর্মীদের দাবি, সেখান থেকে খাবার প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগেই পাঠানো হয়েছে। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় নামে এক কর্মী দাবি করেন, ‘‘প্লাস্টিক তো আমরা আনিনি। জেলা পরিষদের ক্যান্টিন থেকেই এ ভাবে পাঠানো হয়েছে।” সব জেনেও কেন সেই ক্যারিব্যাগে আসা খাবার ফিরিয়ে দিলেন না? তার সদুত্তর অবশ্য তাঁরা দিতে পারেননি।
জেলা পরিষদের ক্যান্টিনই বা কেন প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগে খাবার পাঠাল? খোদ মহকুমাশাসক যেখানে শহরের বিভিন্ন বাজারে গিয়ে প্রচার করেছেন, অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেখানে জেলা পরিষদ চত্বরেই ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিক ব্যাগ? ক্যান্টিন মালিক রাজু রাইয়ের দাবি, “আমি তখন ছিলাম না। ভুল করে কর্মীরা বাতিল ক্যারিব্যাগ দিয়ে ফেলেছে। এমন যাতে আর না হয়, খেয়াল রাখব।”
নদিয়া জেলাশাসক বিভু গোয়েল বলেন, “এ সব বরদাস্ত করা হবে না। আমরা সব রকম চেষ্টা করছি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধ করতে। তার ফাঁকেই কেউ-কেউ ব্যবহার করছেন। সরকারি ভবনে যাতে কোনও ভাবেই এমন আর না ঘটে, তা আমি নিশ্চিত করব।”