মন গলতেই মোবাইল ফিরিয়ে দিল চোর

চোরের এই ‘মহানুভবতা’য় হতবাক হলেও বেজায় খুশি আব্দুস সাত্তার।

Advertisement

বিমান হাজরা

শমসেরগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯ ০০:০৫
Share:

ফোন কানে আব্দুস সাত্তার। নিজস্ব চিত্র

মোবাইল চুরি নতুন কিছু নয়। কিন্তু চুরি যাওয়া মোবাইল বাড়ি বয়ে ফেরত দিয়ে যাওয়ার নজির বড় একটা নেই। অথচ সেটাই ঘটল শমসেরগঞ্জের দেবীদাসপুরে।

Advertisement

চোরের এই ‘মহানুভবতা’য় হতবাক হলেও বেজায় খুশি আব্দুস সাত্তার। পেশায় রাজমিস্ত্রি সাত্তার বলছেন, “এই এলাকায় মোবাইল চুরির ঘটনা প্রায় নিত্যদিনের। কিন্তু চুরির পরে সে মোবাইল ফেরত পাওয়ার ঘটনা তো লটারি পাওয়ার মতো।”

বছর তেত্রিশের আব্দুস সাত্তারের ফোন রয়েছে দীর্ঘ দিন থেকে। বাড়িতে স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার। তাঁদের খবর নিতে ফোন তো দরকারই। কিন্তু সেটি একটা ছোট ফোন, কথা বলা যায় মাত্র। কিন্তু মন ভরে না।

Advertisement

সঙ্গীদের সবার হাতেই স্মার্টফোন। নানা সুবিধা তাতে। কিন্তু অনেক দাম বলে কেনা হয়ে উঠছিল না। বহু দিনের স্মার্টফোনের শখ মেটাতে তাই এবারে ইদের খরচ বাঁচিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর কিনে ফেলেন একটি স্মার্টফোন। স্মার্টফোন কিনে সাত্তার তো খুশি বটেই, বেজায় খুশি তাঁর স্ত্রীও।

দিন চারেক ফোনের খুশিতে নাওয়া খাওয়াও প্রায় বন্ধ গোটা পরিবারের। ফোনের কায়দা দেখে মহাখুশি সাত্তারও। কিন্তু গোল বাঁধল ক’দিন যেতে না যেতেই। সাত্তারের নতুন স্মার্টফোন নজর এড়ায়নি অনেকেরই। দিন চারেক পরে সকালে ঘুম ভাঙতেই সাত্তার দেখেন চার্জারটা পড়ে থাকলেও জানলার পাশে রাখা স্মার্টফোন উধাও। চুরি গিয়েছে সাত্তারের শখের ফোন। এক কান দু’কান হতে হতে গোটা গ্রামেই ছড়িয়ে পড়ল সে খবর।

বন্ধু হামিদ আলির কাছে শখের ফোন চুরির কথা তুলতেই কৌতুহল বশেই নিজের ফোন থেকে ডায়াল করলেন সাত্তারের চুরি যাওয়া ফোনের নম্বরে। রিং-ও বাজল যথারীতি। এমনকি ও প্রান্ত থেকে আওয়াজও এল—‘হ্যালো’।

তাজ্জব হামিদ। চুরি যাওয়া ফোনে হ্যালো? এ কেমন চোর! হামিদের কাছ থেকে ছোঁ মেরে ফোনটা কেড়ে নিলেন সাত্তার, “এই কে বলছিস তুই ? এ ফোন তুই কোথায় পেলি ? এটা তো আমার ফোন? তুই চারদিন আগে চুরি করেছিস আমার বাড়ি থেকে। ”

একটুও না ঘাবড়ে ও প্রান্ত থেকে জবাব এল, “হ্যাঁ, তোমারই তো ফোন , চুরি করেছি। তুমি নতুন স্মার্টফোন কিনেছ জেনেই তো তক্কে তক্কে ছিলাম। সে দিন ফোনে চার্জ দিয়ে নাক ডাকছিলে যখন, তখন গভীর রাত। আমি ঢুকে পড়ি বাড়ির ভিতরে । বারান্দার জানালা ছিল খোলা। সেখান দিয়ে হাত বাড়াতেই দেখি চার্জারে নতুন স্মার্টফোনটা লাগানো। চুরি না করে ছাড়া যায়?”

এ বার সুর নরম সাত্তারের, ‘‘ভাই, আমার বহু দিনের শখ ছিল স্মার্টফোনের। এত দিন পারিনি। ইদের খরচ বাঁচিয়ে কোনও রকমে গত সপ্তাহে সেটি কিনেছি।” সাত্তারের ধানাই পানাই শুনেই ফোনের লাইন কেটে যায়।

কিন্তু ছ’দিন পরেই অবাক করা কাণ্ড। ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ শৌচাগারে যাবেন বলে ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন সাত্তার। বারান্দার চৌকিতে চোখ পড়তেই দেখেন, একটা কিছু পড়ে রয়েছে। তার পরেই আনন্দে চিৎকার করেন সাত্তার, “আরে এ তো আমারই চুরি যাওয়া স্মার্ট ফোনটা।” তার পর থেকেই অনেকেই অপেক্ষায় আছেন, এই বুঝি তাঁর চুরি যাওয়া স্মার্টফোনটাও ফিরিয়ে দেবে চোর। কিন্তু না, দ্বিতীয় বার সে অঘটন ঘটেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement