চোর সন্দেহে মার নয়, সভায় একমত দস্তুরহাট

গোবর্ধনডাঙার তৃণমূল প্রধান অসিফুর শেখ জানান, কারও বাড়ি থেকে গরু-মোষ, কারও মোটরবাইক, কারও আলমারি ভেঙে সোনা-দানা নিয়ে যাচ্ছে চোরেরা। গেরস্থকে ঘরে তালাবন্ধ করে মুখে কাপড় জড়িয়ে লুঠপাটও চালানো হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনও চুরিরই কিনারা হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:১২
Share:

বসল সভা। নিজস্ব চিত্র

প্রবাদটা ছিল, ‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে’। চেনা প্রবাদটা এ বার একটু পাল্টে নিয়ে বলতে হবে, ‘নিরীহ পেটালে বুদ্ধি বাড়ে!’

Advertisement

গত দু’সপ্তাহ ধরে চোরের উপদ্রবে ত্রস্ত সাগরদিঘির বারালা-সাহাপুর, পাটকেলডাঙা, গোবর্ধনডাঙা লাগোয়া তিন পঞ্চায়েতের গ্রামগুলি। আতঙ্কের চোটে শনিবার রাতে দস্তুরহাট গ্রামে আঁধারে দাঁড়িয়ে থাকা ভাইপোকে চিনতে না-পেরে ‘চোর চোর’ বলে চেঁচিয়েছিলেন এক মহিলা। তার জেরে সে বেচারি গণদোলাই খায়। শেষে সিভিক ভল্যান্টিয়ারেরা গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন।

এর পরেই টনক নড়েছে পুলিশের। গ্রামবাসীর আতঙ্ক কাটাতে সোমবার দফায়-দফায় পুলিশ নিয়ে দস্তুরহাট গ্রামে যান সাগরদিঘি থানার ওসি জামালুদ্দিন মণ্ডল। আশ্বাস দেন, এ দিন থেকেই পাতে গোবর্ধনডাঙা ও পাটকেলডাঙার ওই এলাকায় তাঁদের টহলদার গাড়ি ঘু্রবে। চুরি-চামারি কারা করছে, তা-ও অবিলম্বে খুঁজে বের করবে পুলিশ।

Advertisement

ধান কাটা শেষ। দিনমজুরির কাজ প্রায় নেই। একশো দিনের প্রকল্পেও টাকা মিলছে না। পঞ্চায়েত কর্তাদের মতে, লোকের হাতে কাজকর্ম না থাকাতেই চুরি বাড়ছে। সাহাপুর বারালা পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান হাসান আজাদ বলেন, “একশো দিনের কাজ চললেও টাকার জোগান না আসায় বকেয়া প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। দিনমজুরেরা তা হাতে পাননি। লোকের হাতে টাকাপয়সা নেই। এই অনটনেই চুরির ঘটনা বেড়েছে।”

গোবর্ধনডাঙার তৃণমূল প্রধান অসিফুর শেখ জানান, কারও বাড়ি থেকে গরু-মোষ, কারও মোটরবাইক, কারও আলমারি ভেঙে সোনা-দানা নিয়ে যাচ্ছে চোরেরা। গেরস্থকে ঘরে তালাবন্ধ করে মুখে কাপড় জড়িয়ে লুঠপাটও চালানো হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনও চুরিরই কিনারা হয়নি। ধরাও পড়েনি কেউ। তার ফলে গ্রামবাসীর ক্ষোভ বেড়েছে।

কিন্তু সেই ক্ষোভের জেরে কাউকে ধরে গণপিটুনি দিতে হবে, এমনটা মানতে পারছেন না কেউই। অসিফুর শেখ বলেন, “সিভিক ভল্যান্টিয়ারেরা সময় মতো কিশোরটিকে উদ্ধার না করলে অঘটন ঘটে যেতে পারত। তখন খুনের দায়ে পালিয়ে বেড়াতে হত গাঁয়ের লোকেদের। মঙ্গলবারই পঞ্চায়েত থেকে এলাকায় মাইক নিয়ে প্রচার করা হবে, যাতে এমন ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।”

রবিবার বিকেলেই গ্রামের শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে এক সভায় মিলিত হন গ্রামবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হামিদ মধু বলছেন, “চুরি হচ্ছে বলেই রাতে রাস্তায় কাউকে দেখলে চোর সাব্যস্ত করে মারধর করা শুভবুদ্ধির কাজ নয় বলেই মত দস্তুরহাটের সমস্ত মানুষের। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ ভাবে আইন হাতে নেওয়া যাবে না। কাউকে সন্দেহ হলে আটক করে খবর দিতে হবে পুলিশকে।” কিশোরকে বাঁচানোর জন্য সিভিক ভল্যান্টিয়ার আমিরুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম ও আব্দুল লতিবকে পুরস্কৃত করা হবে বলে পুলিশ ইতিমধ্যেই জানিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement