অরঙ্গাবাদ লাগোয়া পাশের এক গ্রামে দুই গোষ্ঠীর বোমাবাজি থামাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন সুতি থানার তৎকালীন ওসি সুরজিত সাধুখাঁ। তার জেরেই সুতির গ্রামগুলিতে বারুদের কারবার বন্ধ করতে উঠেপড়ে লাগে পুলিশ। একের পর এক বিস্ফোরক উদ্ধার হতে থাকে সুতিতে। পুলিশি তাড়ায় এলাকা ছেড়ে তারা আশ্রয় নেয় বিভিন্ন এলাকায়। তারই একটি পিংলা। সেখানে বাজির কারখানায় প্রাণ যায় ১৩ জনের, যাদের মধ্যে ১০ জনই ছিলেন সুতির নতুন চাঁদরার বাসিন্দা।
অরঙ্গাবাদে কাজের অভাব নেই। বিড়ির সঙ্গে জড়িয়ে এলাকার ৬ লক্ষ মানুষ। কিন্তু দিনভর এক হাজার বিড়ি বাঁধার জন্য আয় মাত্র ১৭৮ টাকা। আর বিস্ফোরক দিয়ে পটকা বা বোমা তৈরির কাজটা ভাল জানেন অনেকে। আয়ও বেশি। বিস্ফোরক পাওয়ার পথটাও তাঁরা চেনেন ভাল মতই।সুতি থেকে পা বাড়ালেই ঝাড়খণ্ডের গ্রাম। ঝাড়খণ্ডই সুতিতে যে বিস্ফোরকের মূল জোগানদার পুলিশি তদন্তে বার বার উঠে এসেছে তা। এটাই চেনা রুট। কিন্তু পুলিশের হাতে বার বার সুতিতে বিস্ফোরক সহ ধরা পড়তে থাকায় রুট বদল হয় বারুদ ব্যবসার।
ক্রেতা সেজে পুলিশের রঘুনাথগঞ্জ থানার এক অফিসার ভরদুপুরে হাজির হয় সুতির এক হোটেলে। গাড়ি নিয়ে দুষ্কৃতীদের মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে চাঁদের মোড় থেকে বারুদের তিন কারবারিকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে ৮১ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক আটক করা হয়। গঠিত হয় একটি তদন্তকারী টিম। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঝাড়খণ্ড নয়, কলকাতা থেকে বিস্ফোরক কিনে তারা মজুত করে রাখে স্ট্র্যান্ড রোডের এক ট্রান্সপোর্ট সংস্থার গুদামে। সেই গুদাম থেকেই সরাসরি ওই ট্রান্সপোর্টের লরিতে করে নিয়মিত ভাবে ওই বিস্ফোরক আনা হয় সুতিতে দফায় দফায়। সুতি থেকেই এই বিস্ফোরক বীরভূম ও বর্ধমানের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই স্ট্র্যান্ড রোডের ওই ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির অফিস থেকে ট্রান্সপোর্টের দুই কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জোড়াবাগান থানার সাহায্য নিয়ে ওই ট্রান্সপোর্টের গুদাম থেকে ২২ বস্তায় ১১০০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক ও ৩০ কিলো অ্যালুমিনিয়াম পেস্ট আটক করে।
জানা যায়, সুতির বারুদ কারবারিদের কাছে কলকাতা থেকে বিস্ফোরক ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে নিয়মিত পৌঁছে দিচ্ছে মোটা টাকার বিনিময়ে। সেই সূত্র ধরে ধরা পড়ে অনেকেই। ক্রমশ কমে আসতে থাকে বারুদের লেনদেন।
কিন্তু তা যে বন্ধ হয়নি তার প্রমাণ মিলল ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিমতিতায় তৎকালীন মন্ত্রী জাকির হোসেনের উপর প্রাণঘাতী হামলায়। ওই বিস্ফোরক কাণ্ডের তদন্ত ভার দেওয়া হয় এনআইএ-কে। তদন্তের পর তারা জানিয়ে দেয়, এই প্রাণঘাতী হামলার সঙ্গে যোগ রয়েছে জঙ্গি চক্রের। অথচ ধরা হয়েছে এ পর্যন্ত ৩ জনকে, সুতিতে যারা বিস্ফোরকের কারবারি হিসেবে পুলিশের খাতায় চিহ্নিত। তারা বিস্ফোরক এনে বোমা বাঁধতে পারে, বিস্ফোরকের ব্যবহারে পাকা মাথা তারা। যদিও খোদ জাকির হোসেন বলেন, “এদের কাজে লাগানোর পিছনে রয়েছে পাকা মাথা।” এনআইএ কি পাবে বিস্ফোরক কাণ্ডের সেই পাকা মাথার খোঁজ?