লকডাউনের জেরে কাজ হারিয়ে ভিন্ রাজ্য থেকে ঘরে ফিরেছেন জেলার প্রায় দু’লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক। এলাকায় তাঁদের কাজ দিতে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে জোর দিতে বলা হয়েছে। সরকারের পক্ষ সে সব কাজের কথা প্রচারও করা হচ্ছে। কিন্তু আদৌ কী সবাই কাজ পাচ্ছেন? সরকারি তথ্য বলছে, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কাজ চেয়ে আবেদন করেছে প্রায় ২ লক্ষ ৭৮ হাজার পরিবার। আর সেখানে কাজ পেয়েছে প্রায় ২ লক্ষ ৪ হাজার পরিবার। ফলে ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকে এখনও কাজ পাননি। তাঁরা কাজের দাবি জানিয়েছেন।
পরিযায়ী শ্রমিকরা কী বলছেন? যেমন ভিন্ রাজ্য ফেরত প্রায় দেড়শো পরিযায়ী শ্রমিক সপ্তাহখানেক আগে জলঙ্গির ফরিদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে কাজের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়ে স্মারকলিপি দেন। কিন্তু আজও তাঁরা কাজ পাননি। কেরল ফেরত ফরিদপুরের আজিমুদ্দিন শেখ বলেন, ‘‘আমরা একশো দিনের কাজ চেয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু এখনও কাজ পাইনি।’’ হরিহরপাড়ার রুকুনপুরের কলাবাগাপাড়ার আক্কাস আলি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে গিয়ে কাজ পাইনি। কোথায় গেলে কাজ
পাব বলুন।’’ জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কাজের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। লোকজনকে বেশি বেশি কাজও দেওয়া হচ্ছে। আবেদনকারী ও কাজ পাওয়া লোকের মধ্যে এমন ফারাক সব সময় থাকে। আবেদনকারীদের মধ্যে বকেয়া থাকা ৭৪ হাজার লোককেও কাজ দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের তথ্য দু’একদিনের মধ্যে অনলাইনে উঠবে।
সূত্রের খবর, গত মে মাস পর্যন্ত যেখানে ১৯ লক্ষ ৫০ হাজার শ্রমদিবস তৈরি হয়েছিল। জুন মাসে, গত ২৩ দিনে তা বেড়ে হয়েছে ৪৭ লক্ষ ৬১ হাজার। অর্থাৎ মাত্র ২৩ দিনে ২৮ লক্ষ শ্রমদিবস বেড়েছে। এ বছর এখনও পর্যন্ত যেখানে ৪৭ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে, সেখানে গত বছর এই সময় মাত্র ১৯ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি হয়েছিল।
মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) সুদীপ্ত পোড়েল বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতি এবং পরিযায়ী শ্রমিকরা ঘরে ফেরার কারণে জেলায় একশো দিনের কাজের গতি বাড়ানো হয়েছে। গোটা বছরের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে আমরা দিয়েছি।’’ এত কাজের পরেও অনেকে কাজ না পাওয়ার অভিযোগ তুলছেন, পঞ্চায়েত বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এবিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে? অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) বলেন, ‘‘কাজ চেয়ে আবেদন করলে আইন অনুযায়ী ১৫দিনের মধ্যে কাজ দিতে হবে। এর পরে কেউ কাজ না পেলে বিডিওর কাছে লিখিত ভাবে জানাতে পারেন। আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।’’ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় চলতি বছরে ১কোটি ২৭লক্ষ শ্রমদিবস তৈরির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তার মধ্যে ৪৭লক্ষ শ্রম দিবসে ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। কাজ পেতে গ্রাম পঞ্চায়েতে লিখিতভাবে আবেদন করতে হবে। সেখানে সমস্যা হলে বিডিওর কাছেও কাজ চেয়ে আবেদন করতে হয়।