নদীর ও পারে দেখা যাচ্ছে মঙ্গলদ্বীপ। নিজস্ব চিত্র।
উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রশাসন চরের জমি নিতে চায়। কিন্তু জমি ছাড়তে নারাজ মঙ্গলদ্বীপের চাষিরা। খাতায়-কলমে ওই জমি তাঁদের নয়, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেখানেই চাষবাস করে তাঁরা সংসার চালিয়ে আসছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কার্যত বিনা নোটিসে এসে খুঁটি পুতে দ্বীপের কিছুটা জমি ঘিরে ফেলার কাজ শুরু করেছিল প্রশাসনের লোকজন। জমি হারানোর ভয়ে চাষিরা খুঁটি পোঁতার কাজে বাধা দেন। গত সোমবার সকালের ওই প্রতিরোধে শামিল হন মহিলারাও। বাধা পেয়ে খুঁটি পোঁতা বন্ধ রেখে প্রশাসনের লোকজন ফিরে যায়। রানাঘাট ১ বিডিও সঞ্জীব সরকার বলেন, “এলাকার মানুষের কথা ভেবে সেখানে উন্নয়নে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। সেই কারণে ওখানে খানিকটা জমি নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার চাষিদের সঙ্গে আলোচনা হবে।”
এক দিকে চর জেগে ওঠা মঙ্গলদ্বীপ। বিপরীত দিকে রানাঘাট থানার পায়রাডাঙা শিবপুর ঘাট। মাঝে ভাগীরথী। নৌকায় শিবপুর ঘাট থেকে দ্বীপে যাওয়া যায়। পিকনিক গার্ডেন রয়েছে, বেড়াতেও যান কেউ কেউ। একই ভাবে চাষিরাও যান চাষ করতে।
এক সময়ে ভাগীরথী আর চূর্ণী নদীর মাঝে যে চর জেগে উঠেছিল, লোকমুখে সেটাই ‘মঙ্গলদ্বীপ’ নামে পরিচিত। বাম আমলে সেখানে পর্যটন কেন্দ্রের কাজ শুরু করেছিল। ২০০০ সালের বিধংসী বন্যায় সেখানে ব্যাপক ক্ষতি হয়। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পর সেখানে নতুন করে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে।
পূরাতন শিবপুরের বাসিন্দা বাবলু বিশ্বাস বলেন, “২০০০ সালের বন্যার পরে আমরা ওখানে জমি পরিষ্কার করে চাষবাস শুরু করেছিলাম। তা দিয়ে অনেকের জীবন বাঁচছে। এখন সেই জমিও কেড়ে নেওয়ার উদ্যোগ শুরু হয়েছে।” তাঁদের বক্তব্য, যে এলাকা জুড়ে পিকনিক গার্ডেন তৈরি হয়েছে, সেই এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প হোক। নতুন করে জমির কী দরকার, তা তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না।
পায়রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বিজয়েন্দু বিশ্বাস বলেন, “এক সময়ে আমাদের পঞ্চায়েতের মাধ্যমেই ওই দ্বীপের সব কিছু হয়েছে। এখন ব্লক অফিস থেকে দেখভাল করা হয়। আমরাও শুনেছি, ওখানে জমি নিয়ে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে।” স্থানীয় বাসিন্দা বুলবুলি বিশ্বাস বলেন, “জমি হারানোর বিষয়টি কিন্তু চাষিরা মেনে নেবে না। সেটা প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”