বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের পরীক্ষা চলাকালীনই সামনের চত্বরে মাইক বাডিয়ে চলছে যুব উৎসব। নিজস্ব চিত্র
সরকারি নির্দেশ ছিল, পরীক্ষার মরসুমে মাইক-ডিজে’র ব্যবহার নৈব নৈব চ! নিয়মটা নিজেরাই ভেঙে প্রায়শ্চিত্তের সুরে সরকারি আমলা জানিয়ে দিলেন, ‘‘না না তেমন কোনও অসুবিধা হয়নি পরীক্ষার্থীদের।’’
বহরমপুরে কেএন কলেজে স্নাতক পরীক্ষা চলাকালীন তারস্বরে মাইক বাজিয়ে ছাত্র-যুব উৎসব শুরু হল সোমবার। উদ্বোধনের তুমুল হল্লায় পরীক্ষার্থীরা জানলা বন্ধ করার অনুরোধ করেও শুনতে হল, ‘মিনিট পনেরোর ব্যাপার, মানিয়ে নাও না!’
জেলা যুব-কল্যাণ দফতরের ওই অনুষ্ঠানের পর খুব নির্বিকার গলায় যুব-কল্যাণ ও ক্রীড়া দফতরের আধিকারিক মলয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন “পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই তো মাইকের ব্যবহার শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে শুনেছি। তবে, আমরা কলেজ অধ্যক্ষের অনুমতি নিয়েই যা করার করেছি। উনি তো পরীক্ষার কতা কিছু জানাননি।”
সোমবার ছিল কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা। একই সঙ্গে ওই কলেজে চলছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পরীক্ষাও। সেই পরীক্ষা কেন্দ্রেই উদ্বোধন হল ছাত্র-যুব উৎসবের। পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত অভিভাবকেরা বলছেন, ‘‘সামান্য দায়িত্বজ্ঞানও কী আশা করা যায় না কর্তৃপক্ষের কাছে!’’
জেলা ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের জেলা পর্যায়ের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা শুরু হল সোমবার। জেলার বিভিন্ন ব্লকের ছাত্র-যুব উৎসবের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার সফল প্রতিযোগিরা অংশ নিয়েছিলেন এ দিন কৃষ্ণনাথ কলেজ প্রাঙ্গণে। সকাল দশটায় এই উৎসবের উদ্বোধন হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক-সহ প্রশাসনের আধিকারিকেরাও। কলেজ সূত্রে জানা যায়, বেলা সাড়ে দশটা থেকে ওই কলেজেই শুরু হয়েছে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা। একই সঙ্গে বেলা বারোটায় শুরু হয়েছে স্নাতকোত্তর পরীক্ষাও। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, “চারপাশে গান বাজনা চললে কী পরীক্ষা দেওয়া যায়, কান চেপে পরীক্ষা দিয়েছি!’’
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ কৃষেন্দু রায়, তিনি বলেন, “ঘটনাটি শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের অসুবিধা হওয়ার ঘটনা সম্পূর্ণ অনঅভিপ্রেত।” কলেজ অধ্যক্ষ সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিথি হিসাবে। তিনি অবশ্য দাবি করেছেন, “সম্পূর্ণ অন্য একটি বিল্ডিংয়ে পরীক্ষা হয়েছে। আর উৎসব হয়েছে আর এক জায়গায়। প্রতিযোগিতা হয়েছে ক্লাসের মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষায় অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।”
তবে, তৃণমূল ছাত্রপরিষদের সহ-সভাপতি ভীষ্মদেব কর্মকার বলেন, “দলের কাজে শহরে না থাকায় বিষয়টি জানতে পারি পরে। খোঁজ নিয়ে দেখব কি হয়েছিল।” ছাত্র-পরিষদের জেলা সহ-সভাপতি মেহরাজ সেখ অবশ্য বলেন, “ওরা শিক্ষা বোঝে না। উৎসব বোঝে। তাই পরীক্ষার মর্ম না বুঝেই পরীক্ষা চলাকালীন উৎসব করেছে।”