বারান্দায় ঠাঁই হয়েছে রোগীদের। তাই লাগানো হচ্ছে পাখা। বুধবার তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র
পরিস্থিতি এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি ঠিকই, তবে সমস্ত বিভাগ চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তেহট্ট মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে আপাতত খুব জরুরি হলে তবেই ভর্তি নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
মঙ্গলবার ভোরের অগ্নিকাণ্ডের জেরে কয়েকটি বিভাগ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে। মহিলা ও শিশুদের হাসপাতালের দোতলায় এবং পুরুষ বিভাগকে হাসপাতালের বারান্দায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত বেশ কিছু রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি শিশু ও তাদের মা এবং পুরুষ বিভাগের নয় জন রয়েছেন। ন’জন রোগী আবার অগ্নিকাণ্ড দেখে নিজেরাই পালিয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রের দাবি। তাঁদের খোঁজখবর নিতে মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই সম্পূর্ণ তথ্য পুলিশকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তবে অগ্নিকাণ্ডের পর বারান্দায় থাকতে হওয়ায় পুরুষ বিভাগের রোগীদের সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। রাত থেকেই বারান্দায় বিদ্যুতের আলো জ্বললেও পাখা ছিল না। হাসপাতালে বাইরের দোকান থেকে হাতপাখা কিনে এনে হাওয়া করেছেন রোগীর আত্মীয়েরা। নিমাই দেবনাথ নামে এক বৃদ্ধ বলেন, “শ্বাসকষ্টের সমস্যার জন্য এখানে ভর্তি হয়েছি। কাল রাত থেকে গরমে শরীর হাঁসফাঁস করেছে।” এক রোগীর আত্মীয়া সুজাতা ঘোষ বলেন, “রাত থেকে বীভৎস গরম ছিল। বাইরে থেকে হাতপাখা কিনে আনতে হয়েছে।” তবে বুধবার দুপুরে বারান্দায় থাকা রোগীদের জন্য দশটি পাখার ব্যবস্থা করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাতে গরমের সমস্যা এক রকম মিটেছে। হাসপাতালে দোতলায় আলাদা পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ড থাকায় নীচে থাকা শিশুদের সমস্যা হয়নি। এক শিশুর মা জানান, নার্স এবং চিকিৎসকেরা আসছেন, ভালই পরিষেবা দিচ্ছেন। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে তেমন কোনও অসুবিধা হয়নি।
তবে ক্ষতিগ্রস্ত বিভাগগুলি কবে স্বাভাবিক হবে সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। কারণ তেহট্ট মহকুমার চারটি ব্লক ও ছ’টি থানা এলাকার মানুষ এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সাধারণত পুরুষ বিভাগে ৩৪টি এবং নীচের তলার পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডে ২৮টি শয্যা থাকে। অগ্নিকাণ্ডের পর পুরুষ বিভাগ বারান্দায় স্থানান্তরিত হলে সেখানে শয্যা সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৩টিতে। সে ক্ষেত্রে খুব গুরুতর ছাড়া কোনও নতুন রোগী ভর্তি নেওয়া যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে বুধবার পর্যন্ত রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে তেমন কোনও সমস্যা হয়নি। গুরুতর অসুস্থ কেউ এলে তাঁকে ভর্তি নিতেই হবে। অন্যথায় রোগীকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণে রেখে তার পর সিদ্ধান্ত নেবে জরুরি বিভাগ।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, ক্ষতিগ্রস্ত বিভাগগুলির বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছে। পূর্ত দফতর এবং বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীরা এসে সরেজমিন দেখে গিয়েছেন। খুব দ্রুত দরপত্র চেয়ে কাজ শুরু হবে। কাজ সম্পূর্ণ হতে মাসখানেক লাগতে পারে। তেহট্ট মহকুমা হাসপাতাল সুপার পরাশর পোদ্দার বলেন, “খুব দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত বিভাগগুলির মেরামতের কাজ শুরু হবে। তবে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হবে না। রোগী ভর্তির বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।”