—প্রতীকী ছবি
নভেম্বরের প্রথম দিকে হরিহরপাড়ার আলিনগর গ্রামে ক্লাস টেনের পড়ুয়া বছর ষোলর এক তরুণীর বিয়ে ঠিক করেছিলেন পরিবারের লোকেরা। খবর পেয়ে কন্যাশ্রী যোদ্ধা, পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা বিয়ে রদ করতে পরিবারের লোকেদের কাছে মুচলেকা নেন। একই রকম ভাবে দিন কয়েক আগে নওদার ত্রিমোহনী এলাকার বছর ষোলর এক তরুণী ক্লাস ইলেভেনের পড়ুয়ার বিয়ে ঠিক করেন পরিবারের লোকেরা। বিয়ের দিনই সেই বিয়ে স্থগিত করে পরিবারের লোকেদের কাছে মুচলেকা নেন প্রশাসনের কর্তারা। অথচ তারপরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিয়ে রদের দিন কয়েকের মধ্যেই তারা চুপিসাড়ে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে উঠেছে।
করোনা আবহে প্রায় আট মাস ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুল। স্বভাবতই সোর্স কমেছে ব্লকের কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের। আর এই সুযোগেই চুপিসাড়ে নাবালিকার বিয়ে রদ করছেন এক শ্রেণির অসচেতন অভিভাবক। খবর পেলেই তড়িঘড়ি বাল্যবিবাহ স্থগিত করতে ছুটছেন পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিক, কন্যাশ্রী যোদ্ধা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা। তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে নজরদারির অভাবেই চুপিসাড়ে বাল্যবিবাহটা ঠিক হয়ে যাচ্ছে। এক শ্রেণির অসাধু পুরোহিতের সৌজন্যে গোপনেই হচ্ছে বাল্যবিবাহ। বিয়ে রদের দিনই, কোথাও বা দিন কয়েকের ব্যবধানে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে নাবালিকারা গিয়ে
উঠছে শ্বশুরবাড়িতে।
ফলে একদিকে যেমন হাতছাড়া হচ্ছে কন্যাশ্রী কে -২ প্রকল্পের ২৫ হাজার টাকা, রূপশ্রী প্রকল্পের ২৫ হাজার টাকা। অন্য দিকে দু-এক বছর না ঘুরতেই নাবালিকারা জন্ম দিচ্ছে অপুষ্ট শিশু। ফলে বাড়ছে ‘লাল বাচ্চার’ সংখ্যাটা। একই রকম ভাবে গার্হস্থ্য কলহ, বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ছে বাল্যবিবাহের কারণে।
যদিও প্রশাসনের কর্তাদের দাবি 'কন্যাশ্রী','রূপশ্রী' সহ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প চালু হওয়ায় বাল্যবিবাহ, স্কুল ছুট কমার পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসায় বেড়েছে ছাত্রী সংখ্যা। তবুও এক শ্রেণির মানুষ সমস্ত কিছুকে উপেক্ষা করে অসচেতন ভাবেই চুপিসাড়ে তাদের নাবালিকা মেয়ের বিয়ের বন্দোবস্ত করছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে কোভিড আবহের মধ্যেও প্রায় ২০০ নাবালিকার বিয়ে রদ করা সম্ভব হয়েছে। তার মধ্যে শুধু মাত্র হরিহরপাড়া ব্লকেই এপ্রিল মাস থেকে এপর্যন্ত ৪২ টি নাবালিকার বিয়ে রদ করেছে ব্লকের কন্যাশ্রী যোদ্ধা ও ব্লক প্রশাসন। পড়শি ব্লক নওদা ব্লকেও সংখ্যাটা খুব একটা কম নয়। তবে নজরদারির অভাবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিয়ে স্থগিত করার পরেও চুপিসাড়ে নাবালিকারা গিয়ে উঠছে শ্বশুর বাড়িতে। তবে প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, ‘‘আমরা বাল্যবিবাহ রদ করতে তৎপর। করোনা আবহের মধ্যেও বিয়ে রদের সংখ্যাটা তারই প্রমাণ।’’ করোনা আবহে চুপিসাড়ে নাবালিকার বিয়ের খবর পেয়েই সক্রিয় হয়ে ওঠে কন্যাশ্রী যোদ্ধারাও। হরিহরপাড়া ব্লকের কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের কো-অর্ডিনেটর জাকিরন বিবি বলেন, ‘‘করোনা আবহেও পুলিশ, প্রশাসনের সহায়তায় আমরা ৪২ টি বিয়ে রদ করেছি। মেয়েদেরও সচেতন থাকতে বলেছি।’’ তবে করোনা আবহে নজরদারির অভাবে কিছু কিছু নাবালিকার বিয়ে রদের পরেও সেটা রোখা যাচ্ছে না এ কথা মুখ ফুটে স্বীকার না করলেও স্থানীয় ভাবে সেটাই জানা যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট প্রমাণের অভাবে এবং নাবালিকাদের পারিবারিক অবস্থার কথা ভেবেই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তবে এবিষয়ে সকলকে সচেতন হওয়াটা জরুরি।’’
তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকের মত, বাল্যবিবাহ কেবল সচেতনতার প্রসার করে বন্ধ করা যাবে না। তা বন্ধ করতে হলে শিক্ষার প্রসার দরকার। স্কুলছুট কমানো দরকার। বয়স্কদের সাক্ষর করাটাও জরুরি।