Santipur

প্রধান শিক্ষকের চেষ্টায় দৃষ্টি ফিরে পেল ছাত্র

নদিয়ার শান্তিপুরে কাজী নজরুল বিদ্যাপীঠের শিক্ষকেরা প্রথম থেকেই লক্ষ করছিলেন, ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা দূরে থাক, চোখের খুব কাছে এনেও বইয়ের অক্ষর ঠিক মতো পড়তে পারে না ইউসুফ।

Advertisement

সুদেব দাস

 শান্তিপুর শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৩৩
Share:

অস্ত্রোপচারের পর বাড়িতে ইউসুফ। নিজস্ব চিত্র।

জন্ম থেকেই দুই চোখে সমস্যা ছোট্ট ইউসুফের। বয়স যত বেড়েছে, ততই কমেছে তার দৃষ্টিশক্তি।

Advertisement

একে গরিব পরিবার, তার উপর জানাশোনাও নেই তেমন। ছেলের ‘জন্মগত’ রোগ অদৃষ্টের বিধান বলেই ধরে নিয়েছিলেন বাবা-মা। তবে বাঁচোয়া একটাই, ক্ষীণদৃষ্টি ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। আর, সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভাগ্যের হাতে হাল ছেড়ে বসে
থাকতে নারাজ।

নদিয়ার শান্তিপুরে কাজী নজরুল বিদ্যাপীঠের শিক্ষকেরা প্রথম থেকেই লক্ষ করছিলেন, ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা দূরে থাক, চোখের খুব কাছে এনেও বইয়ের অক্ষর ঠিক মতো পড়তে পারে না ইউসুফ। প্রধান শিক্ষক তপন রায়ের মনে হয়, ঠিক মতো ডাক্তার দেখিয়ে আগে তার ক্ষীণদৃষ্টির কারণ জানা দরকার। তার চিকিৎসা তো থাকতেও পারে। কিন্তু তার জন্য আগে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলা দরকার।

Advertisement

চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া বছর দশেকের ছেলেটির বাড়ি শান্তিপুর শহরের গোপালপুর মুসলিমপাড়া। তার বাবা নইমুদ্দিন শেখ রাজমিস্ত্রির কাজ করেন, মা রোজিনা বিবি শেখ সংসার সামলান। প্রধান শিক্ষক তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বোঝান, হাল ছেড়ে বসে না থেকে ছেলেকে ডাক্তার দেখানো দরকার। তাঁর পরামর্শে কলকাতায় এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ইউসুফকে নিয়ে যান তাঁর বাবা-মা।

এনআরসে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, জন্ম থেকেই ইউসুফের দু’চোখে ছানি রয়েছে, চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘কনজেনিট্যাল ক্যাটারাক্ট’। অস্ত্রোপচার করালেই দৃষ্টি ফিরবে। কিন্তু বাবা-মা সেই ঝুঁকি নিতে চাননি। অস্ত্রোপচারে তাঁদের বড় ভয়। কী থেকে না জানি কী হয়ে যায়! ও-সব ‘ঝঞ্ঝাটে’ না গিয়ে ছেলেকে নিয়ে তাঁরা ফিরে আসেন।

কিন্তু প্রধান শিক্ষক হাল ছাড়তে নারাজ। ছোট্ট একটা অস্ত্রোপচার না-করানোয় ছাত্রটি ক্ষী‌ণদৃষ্টি হয়ে থাকবে, পড়াশোনা করতে পারবে না, এটা তিনি মানতে পারেননি। সপ্তাহ দুয়েক আগে স্কুলেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরের আয়োজন হয়েছিল। সেই শিবিরে এক চক্ষু বিশেষজ্ঞ ছিলেন, তাঁকে দিয়ে ফের ইউসুফের পরীক্ষা করান তপনবাবু। তিনিও জানান, অস্ত্রোপচারেই তার চোখের ছানি সরিয়ে দৃষ্টিশক্তি ফেরানো সম্ভব।

এর পর তপনবাবু ইউসুফের বাবা-মাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে অস্ত্রোপচারের বিষয়ে রাজি করান। গত মঙ্গলবার শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়। চিকিৎসক প্রদীপ দাস বলেন, ‘‘এত কম বয়সি কারও ছানির অস্ত্রোপচার এখানে আমি আগে করিনি। এখন একটি চোখে অস্ত্রোপচার হল, মাস ছয়েক বাদে অন্য চোখেও হবে।’’

বুধবার সকালে গোপালপুরে ইউসুফের বাড়িতে যান প্রধান শিক্ষক। ইউসুফের মা বলেন, ‘‘মাস্টারমশাই আমাদের পথ না দেখালে কিছুই হত না। ছেলে কোনও দিন দেখতে পাবে, এই আশা আমরা ছেড়েই দিয়েছিলাম। ও দেখতে পাচ্ছে, এর চেয়ে আনন্দের কিছু হতে পারে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement