—প্রতীকী চিত্র।
‘সোনার কেল্লা’র দুষ্টুলোকের মতোই নাকি ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছে পঞ্চম শ্রেণি। নবম শ্রেণির পড়ুয়াদের রেজিস্ট্রেশন করানোর সরকারি পোর্টাল দেখে এমনটাই মনে করছে শিক্ষামহল।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদ নবম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পূরণের কাজটি অনলাইনে হবে বলে আগেই জানিয়েছিল। গত ১৫ জুলাই পোর্টাল খুলেছে এবং ৩১ অগস্ট পর্যন্ত খোলা থাকবে। এই সময়ের মধ্যে নবম শ্রেণিতে পাঠরত সকলকে মাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশন ফর্ম পূরণের কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে। ওই পোর্টালে পঞ্চম শ্রেণির কোনও উল্লেখ নেই বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। রেজিস্ট্রেশনের সময়ে প্রতিটি পড়ুয়ার ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য আপলোড করতে বলা হয়েছে, যা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রশ্ন— অধিকাংশ পড়ুয়া যেখানে হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়, সেখানে হঠাৎ করে কেন ষষ্ঠ শ্রেণির তথ্য চাওয়া হচ্ছে?
পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া পড়ুয়াদের সেই অর্থে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির কোনও স্বতন্ত্র তথ্য স্কুলে থাকার কথা নয়। অথচ, রেজিস্ট্রেশন করার জন্য পোর্টালে জানতে চাওয়া হচ্ছে, ওই পড়ুয়া বিদ্যালয়ে কোন শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে এবং কত তারিখে। এর পর ‘ড্রপডাউন মেনু’তে গেলে সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দেখানো হচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণির জায়গাই নেই। এখানেই তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। বিদ্যালয় প্রধানেরা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ স্কুলেই বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। খুব কম সংখ্যক পড়ুয়া আছে, যারা অন্য কোনও স্কুল থেকে এসে ষষ্ঠ বা অন্য শ্রেণিতে ভর্তি হয়।
দেপাড়া-বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অজিত ভট্টাচার্য বলেন, “শুধু ষষ্ঠ কেন, যে কোনও শ্রেণিকে বেছে নিয়ে ফর্ম পূরণ করলেই সংশ্লিষ্ট ছাত্র বা ছাত্রীর রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাবে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে একটা ভুল তথ্যকে লালন করা হবে। এক জন পড়ুয়া পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হবে, অথচ রেজিস্ট্রেশনের সময়ে পোর্টালে পঞ্চম শ্রেণির কোনও উল্লেখ থাকবে না কেন, এটা আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়।”
একই অভিমত কৃষ্ণনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্যের। তিনি বলেন, “পোর্টালে নির্দিষ্ট ভাবে চাওয়া হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য। অথচ, গোটা রাজ্যে বেশির ভাগ স্কুলেই পড়ুয়ারা ভর্তি হয় পঞ্চমে, ষষ্ঠ শ্রেণিতে নয়। সুতরাং, ষষ্ঠ শ্রেণিতে কবে ভর্তি হয়েছিল এই প্রশ্নের উত্তর সকলকেই কাল্পনিক দিতে হবে। অর্থাৎ, বিপুল সংখ্যক পড়ুয়ার যে ডেটাবেস তৈরি হচ্ছে, তা অসঙ্গতিপূর্ণ। যদি পরবর্তী কালে এ সব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তখন তো দায় বর্তাবে স্কুলের উপরেই। আমাদের প্রশ্ন— কেন পঞ্চম শ্রেণিকে এ ভাবে সরিয়ে দেওয়া হল?”
এই প্রসঙ্গে অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসের নদিয়া জেলা সভাপতি সুজয় মুখোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা— “বাংলা ব্যতীত দেশের সব রাজ্যে পঞ্চম শ্রেণি প্রাথমিক স্তরে আছে। এখন যদি সরকারি পোর্টালে পঞ্চম শ্রেণি হাইস্কুলে দেখানো হয়, তা হলে পর্ষদ বিপাকে পড়তে পারে। তাই কৌশল করে এই ব্যবস্থা।”
তাঁরও বক্তব্য ,বিদ্যালয়কে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি দেখাতে হলে পোর্টালে ভুল তথ্য নথিভুক্ত করতে হবে। ভবিষ্যতে এই পড়ুয়াদের চাকরি বা অন্য কোনও কারণে তথ্য যাচাইয়ে সমস্যা হতে পারে। তিনি বলেন, “আমাদের সংগঠনের তরফে ইতিমধ্যেই লিখিত ভাবে পর্ষদের কাছে আপত্তি জানানো হয়েছে।”
পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির নদিয়া জেলা কমিটির সভাপতি কিংশুক চক্রবর্তী বলেন, “স্কুলশিক্ষা দফতর কয়েক বছর আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে সব প্রাথমিক স্কুলে পরিকাঠামো আছে, সেখানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন হবে। কিন্তু এখনও অধিকাংশ প্রাথমিকে পঞ্চম শ্রেণি পড়ানো হয় না। তা হলে যে বিপুল সংখ্যক পড়ুয়া হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ল, তাদের জীবন থেকে পঞ্চম শ্রেণির তথ্য হারিয়ে যাবে না তো? পোর্টাল দেখে তো তেমনই আশঙ্কা হচ্ছে।”