‘ট্রেন অ্যাক্সিডেন্ট প্রিভেনশন সেফটি মডেল’-র সঙ্গে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।
করমণ্ডল, কাঞ্চনজঙ্ঘা, রাজধানী, জ্ঞানেশ্বরী- একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে শয়ে শয়ে প্রাণ। রেল দুর্ঘটনা থেকে নিস্তার খুঁজতে উদ্যোগী একদল খুদে গবেষক। উত্তর কলকাতার দ্য পার্ক ইনস্টিটিউশনের নবম থেকে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা তৈরি করল এমন এক মডেল, যা দিয়ে হয়তো এড়ানো যেতে পারে ট্রেন দুর্ঘটনার পরিস্থিতি।
কিন্তু কী ভাবে?
স্কুলের একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া শুভজিৎ বিশ্বাস ও তাঁর সহপাঠীরা সম্মিলিত ভাবে তৈরি করেছে এই মডেল। নাম দিয়েছে ‘ট্রেন অ্যাক্সিডেন্ট প্রিভেনশন সেফটি মডেল’। মডেলে রয়েছে দু’টি ট্রেন এবং একটি কন্ট্রোল রুম। ট্রেনের মধ্যে ব্যবহার করা হয়েছে আইআর সেন্সর এবং সার্কিট। এই আইআর সেন্সর সামনে একই ট্র্যাকে কোনও ট্রেন থাকলে প্রায় দেড় কিলোমিটার আগে থেকেই তা বুঝে সার্কিটকে খবর দিয়ে দেবে। তখন ট্রেনটি নিজে থেকেই গতি কমিয়ে থেমে যাবে। একইসঙ্গে খবর চলে যাবে কন্ট্রোল রুমেও।
‘ট্রেন অ্যাক্সিডেন্ট প্রিভেনশন সেফটি মডেল’।
মূলত একই লাইনে মুখোমুখি দু’টি ট্রেন আসার ফলে বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে অনেক ক্ষেত্রে। যদি আগে থেকে বোঝা যায় একই ট্র্যাকে দু’টি ট্রেন রয়েছে, তা হলেও এড়ানো যেতে পারে দুর্ঘটনা। শুভজিৎ জানিয়েছে, অনেক সময়েই সিগন্যাল না পাওয়া, চালক ঘুমিয়ে পড়ার মতো পরিস্থিতির কারণে একই ট্র্যাকে দু’টি ট্রেন চলে আসার আশঙ্কা তৈরি হয়। সে ক্ষেত্রে যদি আগে থেকে সেন্সর দিয়ে ট্রেন থামিয়ে দেওয়া যায়, তা হলে দুর্ঘটনার পরিস্থিতি এড়ানো যেতে পারে।
করমণ্ডল রেল দুর্ঘটনার পরেই শুভজিৎ ও তার বন্ধুরা এই মডেল তৈরি করার কথা ভাবে। তাদের ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে এগিয়ে আসেন স্কুলের সহকারী শিক্ষক তুষারশুভ্র মণ্ডল, শিক্ষিকা সাহানা পরভিন-সহ আরও শিক্ষকরা। তুষারশুভ্র বলেন, ‘‘ট্রেনের ইঞ্জিনে এই সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে। যা প্রায় দেড় কিলোমিটার আগে থেকেই বুঝে যাবে সামনে কোনও ট্রেন আছে কি না। যার ফলে আচমকা ব্রেক দেওয়া এবং দুর্ঘটনারও ঝুঁকি থাকবে না। ধীর গতিতেই ট্রেনটি থেমে যাবে।
সম্প্রতি এই মডেল একাধিক পুরস্কারও এনে দিয়েছে স্কুলকে। সাহানা বলেন, ‘‘এটি স্কুলের কোনও প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষার জন্য বানানো নয়। একাধিক রেল দুর্ঘটনা হওয়ার পরে স্কুলের পড়ুয়ারাই এমন মডেল বানানোর কথা আমাদের বলে। আমরা তখন ওদের সব রকম ভাবে সাহায্য করি।’’
অনেক সময়ই ভুল কমিউনিকেশন, রেল চালকের শরীর খারাপ বা ঘুমিয়ে পড়ার মতো ঘটনাও প্রাণ কেড়ে নেয় একাধিক মানুষের। ‘ট্রেন অ্যাক্সিডেন্ট প্রিভেনশন সেফটি মডেল’-র মতো ব্যবস্থাকে যদি বাস্তবায়িত করা যেতে পারে তা হলে এমন দুর্ঘটনা এড়ানো যেতে পারে বলেই মনে করে ওই পড়ুয়ারা।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুপ্রিয় পাঁজা বলেন, ‘‘এই মডেলকে আরও কী ভাবে উন্নত করা যায়, সেই দিকেও নজর দিচ্ছি আমরা। বাস্তবায়িত করার স্বার্থে ভবিষ্যতে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে বা অন্য কী উপায়ে জায়গামতো এই মডেল পৌঁছনো যায়, সেই নিয়েও ভাবনা চিন্তা চলছে’’।
প্রসঙ্গত, এর আগে মেট্রোয় দুর্ঘটনা, পাহাড়ের বাঁকে দুর্ঘটনা কী ভাবে রোধ করা যায়, সেই নিয়েও নানা মডেল তৈরি করেছে এই স্কুলের ছাত্ররা। সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নানা মডেল তৈরি করার প্রস্তুতিতে জোট বেঁধে কাজ করে চলেছে দ্য পার্ক ইনস্টিটিউশনের একদল পড়ুয়া।