—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
গর্বের কন্যাশ্রীতে প্রায় ১৭৬ কোটি টাকা বাজেট কমাল রাজ্য সরকার। তবে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় মুর্শিদাবাদের স্কুল শিক্ষক ও শিক্ষক সংগঠনগুলি।
কারণ বাজেটে বরাদ্দ বাড়িয়ে বা কমিয়ে নয়, কন্যাশ্রী প্রকল্পকে আর্থিক দিক দিয়ে দুর্বল শ্রেণির জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়ার দাবি তুললেন তারা। সেই সঙ্গে ২৫ হাজার টাকার জায়গায় ছাত্রী প্রতি বরাদ্দ বাড়িয়ে কিশোরীদের আরও বেশি স্কুলমুখী করে তোলার চেষ্টা করা উচিত রাজ্যের, বিশেষ করে মুর্শিদাবাদের মতো জেলাগুলিতে, যেখানে স্কুলছুট ও বাল্য বিবাহের প্রবণতা বেশি।
এ বারে রাজ্য বাজেটে কন্যাশ্রী প্রকল্পে গত বারের বরাদ্দ ১৫৫০.১৩ কোটি থেকে কমিয়ে ১৩৭৪.৫০ কোটি টাকা করা হয়েছে। সিপিএম, কংগ্রেস, এমনকি তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনগুলির দাবি, এই প্রকল্প নিয়ে রাজ্য সরকারের উচিত নতুন করে ভাবনা চিন্তা করে তাকে সামাজিক উন্নয়নের উপযোগী করে তুলতে পদক্ষেপ করা।
২০১৩ সালে কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করা হয় মূলত রাজ্যে নাবালিকা বিবাহের অবসান ঘটানো ও মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার আরও প্রসারের জন্য। ১৩ থেকে ১৮ বছরের কিশোরীরা এর সুযোগ হিসেবে ২৫ হাজার টাকা পেয়ে থাকে। এই প্রকল্প চালুর সময় ১.২০ লক্ষ টাকা আয় বিশিষ্ট পরিবারগুলিকেই অর্থ দেওয়ার বিধান ছিল। কিন্তু ভোট রাজনীতি বড় বালাই। তাই গত কয়েক বছর থেকেই কোটিপতি পরিবারের পড়ুয়া মেয়েরাও কন্যাশ্রী প্রকল্পে ২৫ হাজার টাকা পায়।
শিক্ষক সংগঠনগুলির দাবি এই ‘অপাত্রে দান’ বন্ধ করে দুঃস্থ পরিবারগুলিকে এর আওতায় রেখে আর্থিক পরিমাণ বাড়ানো উচিত।
সিপিএমের মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি জুলফিকার আলি বলেন, “আমরা বরাবরই দাবি করে এসেছি পারিবারিক অর্থনৈতিক সমীক্ষা করেই এই প্রকল্প চালু রাখা উচিত।আগে অর্থনৈতিক বাধা নিষেধ ছিল। তা সত্বেও কিছু দুর্নীতি হত না তা নয়। কিন্তু এখন সকলকেই অবাধে এই সুবিধা চালু হওয়ায় অপাত্রে দান বাড়ছে। মোটামুটি ভাবে এই সংখ্যাটা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। এদের জন্য অর্থ খরচ না করে দুঃস্থ পরিবারের কন্যাশ্রীদের বরাদ্দ ২৫ থেকে ৪০ হাজার করা হোক। কারণ আর্থিক কারণে স্কুল ছুট বা নাবালিকা বিয়ের সম্ভাবনা সেখানেই বেশি,স্বচ্ছল পরিবারের কারুরই সে সমস্যা নেই।”
তৃণমূলের শিক্ষক নেতা শেখ ফুরকানও বলেন, “নাবালিকা বিয়ে ও স্কুল ছুটের সম্ভাবনা বেশি যাদের তাদেরই এই কন্যাশ্রী প্রকল্পে রাখা উচিত। কন্যাশ্রী দিয়েও মুর্শিদাবাদে বাল্য বিবাহ কমেনি। সেক্ষেত্রে যাদের ঘরের মেয়েরা পিছিয়ে পড়া তাদের ক্ষেত্রে কন্যাশ্রীর অনুদান কিছু বাড়লে জেলায় বাল্য বিবাহ কমানো যাবে।”
মুর্শিদাবাদে বাল্য বিবাহ নিয়ে কাজ করে যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তার সহকারী অধিকর্তা জয়ন্ত চৌধুরী বলেন, “কন্যাশ্রী তাদেরই পাওয়া উচিত যাদের পরিবারে বাল্য বিবাহের আশঙ্কা থাকে নানা কারণে।” কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি গোলাম মোস্তফা সরকারও বলছেন, “অকাতরে দান ভাল লক্ষণ নয়। যে কারণে দান তা যদি কাজে না আসে তবে তা অর্থহীন।” সুতির ছাবঘাটি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৌশিক দাসও বলছেন, “কন্যাশ্রীর টাকা সব ছাত্রীর দরকার নেই। যাদের বাল্যবিবাহের আশঙ্কা রয়েছে, তাদের ঘরে টাকাটা গেলে অনেকটা কাজে দেবে। সেটাই করা দরকার সরকারের।”