আমদানি ইলিশের। কৃষ্ণনগরের গোয়ারি বাজারে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।
ছড়ানো কলাপাতায় রকমারি সাইজের। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির কুচি গায়ে মেখে চকচক করছে। দেখলেই মন ভাল হয়ে যায়। কারও পছন্দ একটু চওড়া ইলিশ। কারও ডিম ভরা ইলিশে আপত্তি। তো কেউ ডিম ছাড়া ইলিশ নেবেনই না। অর্ধবৃত্তাকারে ঘিরে ধরা ইলিশপ্রেমীদের আবদার সামলাতে হিমশিম। তবুও অনেক দিন পর মাছ বিক্রেতা নবদ্বীপের বাদল হালদার, চাকদহের আনন্দ বিশ্বাস কিংবা কৃষ্ণনগরের শতদল হালদারের মুখে স্বস্তির হাসি দেখেছে রবিবারের সকাল।
সাগর থেকে ফেরা রুপোলি জলপরির খোঁজে বৃথাই গিয়েছে আষাঢ়ে দিন। আশার ছলনে ভুলি রোজ থলে হাতে বাজারের এ মুড়ো ও মুড়ো চষে ফেলেছেন ঘোষ, বসু, দত্তবাবুরা। শেষমেশ কাটা পোনা কিনে, তুমি বিনে এ বরষা বিফলে যায় বুঝি গাইতে গাইতে হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরা। শ্রাবণ গগনে ঘোর ঘনঘটা দেখা দিতেই ছবিটা কিছুটা বদলেছে। নবদ্বীপ থেকে নাকাশিপাড়া, কৃষ্ণনগর থেকে করিমপুরের মাছবাজার সর্বত্র বিরাট কিছু না হলেও একটু যেন কমতির দিকে দাম। অন্তত একশো টাকার হেরফের তো হয়েছেই। অতএব ছুটির দিনে চোখ বুজে একটা গোটা ইলিশ কিনে ফেলার তৃপ্তিই আলাদা!
জেলার খুচরো ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, অনেক দিন পর গত কয়েক দিন ধরে ইলিশের জোগান বাড়ছে। মূলত ডায়মন্ড হারবার, দীঘা এবং কিছুটা ওড়িশা থেকে ভাল পরিমাণে ইলিশ ঢুকছে বাজারে। আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় ‘ইলশে গুঁড়ির নাচন দেখে নাচছে ইলিশ মাছ’। ইলিশের কারবারি বাদল হালদার বলছেন, “এ ভাবেই চললে বাজারে আরও বাড়বে জোগান। কমবে দাম।” চারদিকে এত কিছু খারাপের মধ্যেও মন ভাল হয়ে যাওয়ার মতো খবর। রবিবার নদিয়ার বিভিন্ন বাজারে ওজন বুঝে ইলিশ মাছ বিকিয়েছে ৫০০ থেকে ১৮০০-২০০০ টাকার মধ্যে। দেদার মিলেছে পাঁচশো গ্রাম থেকে এক কেজি, বারশো গ্রাম ওজনের মাছ। মোটমুটি ভাবে ওজন এবং দামের মধ্যে একটা আনুপাতিক ভারসাম্য রেখেই ইলিশের মরসুম শুরু হয়ে গেল বাংলায়।
জেলায় মাছের বড় পাইকার চিন্ময় ভৌমিক বলেন, “এখন যে আবহাওয়া চলছে সেটা ইলিশের। ফলে দিঘা বা ডায়মন্ড হারবারে ভালই মাছ উঠছে। সেই মাছই আসছে স্থানীয় বাজারে। প্রকৃতির কথা কিছু বলা যায় না। তবে যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে আরও জোগান বাড়বে এবং দামও কমবে।” চাকদহের মৎস্য ব্যবসায়ী আনন্দ বিশ্বাস বলেন, “জোগান বেড়ে যাওয়ার কারণ আবহাওয়া সর্বত্র ইলিশ ধরার জন্য অনুকূল। ফলে রাজ্যের বাইরে ওড়িশা থেকেও প্রচুর মাছ আসছে। মনে হচ্ছে ইলিশের এই জোগান কিছু দিন বজায় থাকবে। দাম আরও কমছে।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আষাঢ়ে বৃষ্টি না-হওয়া এবং অস্বাভাবিক গরমের জন্য ইলিশের আমদানি কম ছিল।
এখন অবশ্য ‘রোদহীন মেঘলা আকাশ। স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া। ঠান্ডা পুবালি বাতাসের সঙ্গে কাঁপন ধরনো ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি!’ যাকে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসে ইলিশ ধরার আদর্শ আবহাওয়া বলেছেন। অমনই ইলিশের ঝাঁকে ছয়লাপ দিঘা থেকে ডায়মন্ড হারবার।