তপ্ত দুপুর। বুধবার কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
পুরো ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। তার আগেই বদলে গেল রাজ্যের সরকারি স্কুলে গরমের ছুটি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত। সম্ভাব্য তাপপ্রবাহের কথা মাথায় রেখে ফের ১০ দিন বেড়ে গেল গরমের ছুটির মেয়াদ। ফলে সিলেবাস কী ভাবে শেষ হবে, তা নিয়ে শিক্ষকদের একাংশ চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
বুধবার দুপুরে এই বর্ধিত গ্রীষ্মাবকাশের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ মঙ্গলবার রাজ্যের শিক্ষা দফতর এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছিল, আগামী ৫ জুন থেকে রাজ্যের সরকার-পোষিত এবং সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়গুলিতে এবং ৭ জুন থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে পঠনপাঠন শুরু হবে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানালেন, এখনই নয়, স্কুল খুলবে আগামী ১৫ জুন।
গত ২ মে থেকে রাজ্যের সরকার-পোষিত এবং সরকারি স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি শুরু হয়েছে। যদিও সরকারি তালিকা মোতাবেক এ বছর গ্রীষ্মের ছুটি নির্ধারিত ছিল ২৪ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত। কিন্তু তিন সপ্তাহেরও বেশি এগিয়ে গরমের ছুটি পড়ে যায় মে মাসের শুরু থেকেই। এমনিতেই লম্বা ছুটির পর ফের আরও ১০ দিনের ছুটি ঘোষণায় শিক্ষামহলে প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। শিক্ষা দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করার পরের দিনই মুখ্যমন্ত্রী সেই নির্দেশিকা বাতিল করে ছুটির মেয়াদ বাড়ানোয় সরকারের বিভিন্ন দফতরের মধ্যে তালমিল নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
শিক্ষকদের একাংশের মতে, মারাত্মক দাবদাহ চলছে। এখন স্কুল খুললে ছাত্রছাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়বে। মুখ্যমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। তবে পাল্টা যুক্তির দিকেই পাল্লা বেশি ভারী। শিক্ষকদের আর এক অংশের বক্তব্য, অন্য বোর্ডের পড়ুয়ারা দিব্যি ক্লাস করছে। তাদের তো মে মাসের গোড়া থেকে গরমের ছুটি পড়েনি। তারা যদি সুস্থ থাকতে পারে, সরকারি স্কুলে সমস্যাটা কোথায়?
শিক্ষকদের একাংশের আশঙ্কা, ছুটির ঠেলায় সিলেবাসই শেষ করা যাবে না। দেড় মাস ধরে গরমের ছুটি ভাবতেই পারছেন না তাঁদের অনেকে। এমনকি শাসক দলের সমর্থক শিক্ষক সংগঠনের সদস্যদের অনেকে প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও ঘনিষ্ঠ মহলে হতাশা চেপে রাখছেন না। অভিজ্ঞ শিক্ষকদের মতে, দীর্ঘায়িত ছুটির ফলে সিলেবাসে কাটছাঁট করতে হবে, যা আদতে পড়ুয়াদের ক্ষতি করবে।
নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির নদিয়া জেলা সম্পাদক সৌমেন পালের দাবি, “আমরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছি, বর্তমান সরকার রাজ্যের সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করছে। অনন্ত ছুটি তারই অঙ্গ।” নদিয়া উত্তরের বিজেপি শিক্ষক সেলের আহ্বায়ক অমিত চট্টোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, “এই ছুটি আসলে সরকারি স্কুলের প্রতি মানুষকে বিরূপ করে তোলার কৌশল। এমনিতেই জয়েন্টের মতো পরীক্ষায় বাংলা মাধ্যমের ব্যর্থতা প্রমাণ হয়েছে। কেন এত দিন ধরে স্কুল বন্ধ করছে সরকার?”
শিক্ষামহলের একটি বড় অংশের প্রশ্ন, মঙ্গলবার যখন স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত ঘোষণা হয়েছিল তখনও গরমের দাপট একই রকম ছিল। তা হলে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল কেন? ৫ মে আসতে এখনও পাঁচ দিন বাকি। আবহাওয়ার গতিক কোন দিকে মোড় নেবে তা বোঝার আগেই ফের স্কুল বন্ধের নির্দেশই বা দেওয়া হল কেন? শিশু মনস্তত্ত্বের দিক থেকেও এমন পরস্পর বিরোধী সিদ্ধান্ত ক্ষতিকর বলেই মনে করছেন তাঁরা।
তবে, পশ্চিমবঙ্গ তৃণমুল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির নদিয়া জেলা সভাপতি রমেন ঘোষ বলছেন, “আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, এই সিদ্ধান্ত সঠিক। আবহাওয়া দফতরের তরফে ফের তাপপ্রবাহের সতর্কতা রয়েছে। এই গরমের দুপুরে স্কুল করতে বলা এক ধরনের শাস্তি। মুখ্যমন্ত্রী ঠিক কাজই করেছেন।”