প্রতীকী ছবি।
সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে চতুর্থ বারের মতো সিপিএমের জেলা সম্পাদক হলেন সুমিত দে-ই। আগের তিন বারের মতো এ বারও একাধিক নাম উঠে এলেও দলের অভ্যন্তরে অনেকেই কিন্তু প্রথম থেকে ধরে নিয়েছিলেন যে তিনিই পদে থাকছেন।
সিপিএমের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কেউ ‘তিনটি সম্পূর্ণ মেয়াদ’-এর বেশি জেলা সম্পাদক পদে থাকতে পারেন না। সুমিতবাবু তিন বারের সম্পাদক হলেও প্রথম বার, ২০১১ সালে শুরু থেকেই তিনি এই পদ সামলাননি। জেলা সম্পাদক হয়েছিলেন আশু ঘোষ, যাঁর শারীরিক অক্ষমতার জেরে কয়েক মাস বাদে সুমিতবাবুকে এই পদে আনা হয়। ফলে খাতায়-কলমে তিনি ‘তিনটি সম্পূর্ণ মেয়াদ’ কাটাননি। এই নিয়মের প্রয়োগ নিয়ে দলের একাংশের সংশয় থাকলেও শুক্রবার নদিয়া জেলা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে এই যু্ক্তিই মান্যতা পেয়েছে। ফলে সুমিতের জেলা সম্পাদক পদে ফেরায় বাধা থাকেনি। তিনি নিজে অবশ্য এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, বলেন, “আমাদের সম্মেলন সফল। আগামী দিনে সবাই মিলে লড়াই আন্দোলন চালিয়ে যাব। সেই মতো রূপরেখাও তৈরি হয়েছে।”
সিপিএম সূত্রের খবর, একটি ক্ষেত্র ছাড়া এক প্রকার বিতর্কহীন ভাবেই শেষ হয়েছে এ বারের জেলা সম্মেলন। শুধু কৃষ্ণনগর শহর এরিয়া কমিটির সদস্য অনীক পালকে জেলা কমিটির সদস্য করার জন্য নাম প্রস্তাব করেন পরেশ দত্ত। তাঁর এই প্রস্তাব সমর্থন করেন সুমিত চাকি। এতেই বিতর্কের অবকাশ তৈরি হয়। পরে সুমিত চাকি তাঁর সমর্থন তুলে নেওয়ায় বিতর্কের পরিস্থিতি থাকেনি।
নদিয়া জেলায় সিপিএমের ৩১টি এরিয়া কমিটি আছে। বড় এরিয়া কমিটির জন্য ১৮ মিনিট, মাঝারির জন্য ১৫ মিনিট আর ছোট কমিটির জন্য ১২ মিনিট করে প্রতিনিধিদের বলার বলার সময় বরাদ্দ হয়েছিল। কোন বক্তা প্রশ্ন তুলেছেন, অন্য দেশ বা রাজ্যগুলিতে যখন বামেদের শক্তিবৃদ্ধি হচ্ছে তখন এই রাজ্যে শক্তিবৃদ্ধি তো দূরের কথা, রক্তক্ষরণই থামানো যাচ্ছে না কেন? দলের রাজ্য নেতৃত্বের একাধিক পদক্ষেপের সমালোচনাও উঠে আসে। দু’দিনের সম্মেলনে বিভিন্ন এরিয়া কমিটির প্রতিনিধিরা নানা সমালোচনায় বিদ্ধ করেন দলের নেতৃত্বকে। তার মধ্যে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা যেমন উঠেছে, তেমন দলের নীতিগত অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সম্মেলন প্রতিনিধিরা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃদুল দে প্রমুখ মঞ্চে উপস্থিত ছি্লেন।
আলোচনা-সমালোচনা সাঙ্গ হলে নতুন জেলা কমিটি তৈরি হয়। জেলা কমিটি থেকে বাদ গিয়েছেন বেশ কয়েক জন পুরনো নেতা। দলীয় সূত্রে খবর, সেই তালিকায় আছেন শান্তনু চক্রবর্তী, অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়, আজাদ আলি শেখ, বাদল দত্ত, সুধন্য সরকার ও পবিত্র সমাদ্দার। নতুন জেলা কমিটিতে নেওয়া হয়েছে দলের ‘তরুণ মুখ’ গোলাম রাব্বি, স্বরূপ মুখোপাধ্যায়, ভগীরথ ধর, অরুণ চক্রবর্তী, মধুছন্দা গুহ, সবুজ দাস ও দিব্যেন্দু ভট্টাচার্যদের।
আপাতত তারুণ্যে ভর দিয়েই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে সিপিএম। নতুন জেলা কমিটি মরা গাঙে তরী বাইতে পারে কি না, তা বলবে সময়।