Pulwama Attack 2019

পুলওয়ামা হানায় প্রাণ যায়, পাঁচ বছরেও চাকরি পাননি কোনও সদস্য, কষ্টে দিন কাটছে সুদীপের পরিবারের

রাজ্যের কাছে সরকারি চাকরির আর্জি জানিয়েছেন তার বোন। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক।

Advertisement

প্রণয় ঘোষ

তেহট্ট শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:৩৭
Share:

কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে জীবন কাটছে সুদীপের পরিবারের। —নিজস্ব চিত্র।

পুলাওয়ামা হামলার ঘটনা পাঁচ বছর পা দেবে বুধবার। ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় নিহত ৪০ জন জওয়ানের মধ্যে ছিলেন বাংলার দুই সন্তানও। নদিয়া জেলার সুদীপ বিশ্বাস এবং হাওড়ার বাবলু সাঁতরা। ফের পেরিয়ে যাচ্ছে আরও একটা বছর। এত দিনেও বদলায়নি তাঁদের অবস্থা, লাল ফিতের ফাঁসে আটকে রয়েছে প্রতিশ্রুতি। নদিয়ার তেহট্টের হাঁসপুকুরিয়ার বাসিন্দা শহিদ সুদীপের অসুস্থ বাবা-মা এখন থাকেন চকবিহারী গ্রামে তাঁর দিদি-জামাইবাবুর বাড়িতে। সামান্য পেনশনে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে তাঁর পরিবার। সরকারের পক্ষ থেকে সুদীপের বোনকে একটি সরকারি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। এই নিয়ে ক্ষোভ ও অভিমান রয়েছে সুদীপের পরিবারে। সরকারের থেকে প্রাপ্য পাওনা-গণ্ডা মিটলেও, রাজ্যের দেওয়া এককালীন পাঁচ লক্ষ টাকা ছাড়া আর কিছুই পায়নি পরিবার, এমনটাই অভিযোগ সুদীপের বাবার। রাজ্যের কাছে সরকারি চাকরির আর্জি জানিয়েছেন তার বোন। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক।

Advertisement

ঠিক কী ঘটেছিল ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি? শহিদ জওয়ান সুদীপের বাবা সন্ন্যাসী বিশ্বাস ধরে যাওয়া গলায় সেদিনের স্মৃতি রোমন্থন করলেন। কান্না ভেজা চোখে তিনি বলেন, “সবে জিজ্ঞেস করেছি, ‘কেমন আছ তোমরা সবাই?’ আচমকাই সব স্তব্ধ। কেটে গেল লাইন। তার পর থেকে সুদীপের ফোন বন্ধ। বারবার চেষ্টা করেও ফোন পাওয়া যাচ্ছে না। কী হল? এমন তো হয় না? উৎকণ্ঠার মধ্যেই বিকেল গড়িয়ে গেল সন্ধ্যায়। কেন ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না? এই প্রশ্নের সঙ্গেই ক্রমে বাড়তে থাকলে উৎকণ্ঠা। সেই সময়েই টিভি পর্দায় ভেসে ওঠে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফের কনভয়ে হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। সেই হামলায় শহিদ হওয়া ৪০ জনের মধ্যে রয়েছেন তাঁদের একমাত্র ছেলে সুদীপও।

ঘটনার দিন সকালে শেষ বারের মতো ফোনে কথা হয়েছিল সন্ন্যাসীর। সুদীপ ছিলেন সিআরপিএফে কর্মরত। পোস্টিং ছিল জম্মু-কাশ্মীরে। সে দিন সকালে সুদীপ তাঁর বাবাকে জানিয়েছিলেন, “জম্মু থেকে শ্রীনগরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছি। ব্যারাকে গিয়ে খেয়ে নেব। চিন্তা কোরো না। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরব।” সেই কথা রাখতে পারেননি সুদীপ। ছেলের দুঃখ আর বয়সজনিত কারণে উত্তরোত্তর বেড়েছে শারীরিক অসুস্থতা। বেড়েছে ওষুধের খরচ, নিত্যদিনের আর্থিক চাহিদা। স্ত্রীয়েক সামান্য পেনশনে গোটা পরিবারের খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন এমনটাই দাবি, সন্ন্যাসীর। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এককালীন ৫ লক্ষ টাকার আর্থিক অনুদান ও একটি সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও আজও তা পূরণ হয়নি। ফের আরো একটা বর্ষপূর্তিতে ক্ষোভ বাড়ছে তা নিয়েও।

Advertisement

সুদীপের জামাইবাবু সমাপ্ত বিশ্বাস একটা ছোট্ট হার্ডওয়ারের দোকান চালান। তিনি বলেন, “পরিবারের রোজগেরে বলতে একমাত্র আমি। সুদীপের মৃত্যুর পর শ্বশুর ও শাশুড়ি আমার বাড়িতেই রয়েছেন। বয়সজনিত অসুস্থতায় অনেক টাকার ওষুধ লাগে মাসে। একার রোজগারে কুলিয়ে উঠতে হিমশিম খাচ্ছি।”

সুদীপের মা মমতাদেবী বলেন, “ছেলের অফিসাররা মাঝেমধ্যে এসে খোঁজ নিয়ে যায়। ব্যস ওই টুকুই। রাজ্য সরকারের প্রতিশ্রুতিমত মেয়ের একটা চাকরি হলে আমাদের খরচ টানতে ওঁদের হিমশিম খেতে হতো না।”

বোন ঝুম্পার গলাতে অভিমানের সুর। তিনি জানান, “রাজ্য সরকার এত প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করছে। দুর্ঘটনায় মারা গেলেও চাকরি জুটছে তাঁদের কপালে। আমার ভাই দেশের জন্য প্রাণ দিল, তৎকালীন প্রশাসনিক কর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিল এক মাসের মধ্যে চাকরি হয়ে যাবে। আজ চার বছর পার হতে চলল স্থায়ী চাকরি তো দূরের কথা একটা অস্থায়ী চাকরিও দিল না রাজ্য সরকার। ন্যূনতম মানবিকতা আশা করেছিলাম সরকারের কাছ থেকে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement