শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে এক অসুস্থ ছাত্রী। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।
রাতে হস্টেলের ভিতর হুল্লোড় করায় আবাসিক ছাত্রীদের একশো বার ওঠ-বস করানো হয়েছিল। এর পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে ছ’জন। বুধবার রাতে তাদের শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকালেই অবশ্য তাদের ছেড়ে দেন চিকিৎসক। এই ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।
বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে কৃষ্ণনগরের পানিনালা এলাকায় ইংরেজি মাধ্যম নদিয়া মডেল মাদ্রাসায়। এই মাদ্রাসায় অনেক ছাত্রছাত্রীই হস্টেলে থেকে পড়াশুনো করে। বর্তমানে হস্টেলে ৬৫ জন করে থাকে। এখন ফাইনাল পরীক্ষা চলছে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, মাঝে-মধ্যেই রাতে আবাসিক ছাত্রীরা হুল্লোড় করায় আশপাশের বাড়ি থেকে আপত্তি জানিয়ে ফোন আসে। বুধবার রাতেও একই ঘটনা ঘটে। ছাত্রীদের হস্টেলের মেট্রন রাহেনা বিবি মল্লিক চেঁচামেচি বন্ধ করতে বলেন। কিন্তু কোনও কোনও ছাত্রী কথা না শোনায় তিনি শাস্তি দেন বলে মেট্রনের দাবি।
তাঁর কথায়, “এখন পরীক্ষা চলছে। মেয়েরা পড়াশোনা না করে অনেক রাত পর্যন্ত আলো জালিয়ে গল্প করে। মাঝে-মধ্যেই তাদের হুল্লোড়ের কারণে আশপাশের বাড়ি থেকে নালিশ জানিয়ে ফোন আসে।”
সে দিন মেট্রন ৬১ জন ছাত্রীকে একশো বার করে ওঠ-বস করান বলে অভিযোগ। তিনি বলেন, “বারবার বারণ করা সত্ত্বেও ওরা কথা না শোনায় আমি শাসন করার জন্য শাস্তি দিয়েছি। তবে এটা ঠিক যে শাস্তির বহরটা হয়তো বেশি হয়ে গিয়েছে।”
অসুস্থ ছাত্রীরা অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী আশা খাতুন ও মেঘনা সুলতানা বলে, “হস্টেলে সকলেই হুল্লোড় করে না বা রাত জেগে গল্প করে না। কেউ কেউ করে। অথচ মেট্রন আমাদের সবাইকেই ওঠ-বস করালেন। আমাদের কোনও কথাই শুনলেন না। এতগুলো ওঠ-বস করার ফলে আমাদের শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। হাত-পা কাঁপতে থাকে।”
খবর পেয়ে চলে আসেন অসুস্থ হয়ে পড়া পড়ুয়াদের অভিভাবকরা। এঁদের মধ্যে খালেদা বিবি, রেখা বিবিরা বলেন, “পরীক্ষা সময়ে পড়াশোনা ফেলে হুল্লোড় করলে শাস্তি তো পেতেই হবে। এটা নিয়ে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু এতটা শাস্তি কেন দেওয়া হল যাতে মেয়েগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ল? এটা মানা যাচ্ছে না।”
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মৃন্ময় পাল বলেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। এমনটা হওয়া উচিত নয়। আমরা গোটা বিষয়টি ভাল করে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয়
পদক্ষেপ করব।”